ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলাসহ শীতের সবজির দাপট কমে আসছে কাঁচাবাজারে। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে মাছ, মাংস, সবজি কিনতে গিয়ে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের। বেশির ভাগ সবজির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মাছও মিলছে না কমের মধ্যে।শুক্রবার সকালে মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারে শীতকালীন সবজির পাশাপাশি নতুন করে বর্ষাকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। তবে দাম এখনও কিছুটা বেশি। এদিকে মুরগি, ডিম কিনতেও বেগ পেতে হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের।

শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা যায় শিম, করলা, ধুন্দল, চিচিঙা, ঢেঁড়স, পটল মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, টমেটো ৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধা কপি ২০/২৫ টাকা, গাজর ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মরিচ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।লাল শাক আঁটি ৫ টাকা, লাউ শাক ৮/১০ টাকা, পালং শাক ১০/১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।সবজি বিক্রেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, শীতের সবজি শেষে বর্ষাকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে এজন্য দাম কিছুটা বেশি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম কমে আসবে।মিরপুর বেনারসি পল্লির বাসিন্দা মনসুর আহমেদ বলেন, বাজারে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম কিছুটা বেশি। আমাদের মতো নিম্নবিত্তদের জন্য কিনে খাওয়াটা কষ্টকর।ব্রয়লার মুরগি, পাঙাস, তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, ছোট মৃগেল, ছোট রুই, হাইব্রিড কই মাছ ছাড়া অন্য মাছ কেনার সাহস পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি বড় ইলিশ ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।ছোট রুই ২২০-২৪০ টাকা, বড় রুই ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ৫০০-৭০০ টাকা, চিতল ৫০০-৬০০ টাকা, দেশি শিং ৫০০-৭০০ টাকা, মাগুর ৫০০-৬০০ টাকা, রুপচাঁদা ৮০০-৯০০ টাকা, বড় বোয়াল ৯০০-১০০০ টাকা, মাঝারি বোয়াল ৫০০-৭০০ টাকা, বড় শোল ৫৫০-৬০০ টাকা, ছোট শোল ৩৫০-৪০০ টাকা, পাবদা ৫০০-৬০০ টাকা, কই ২০০-২২০ টাকা, টেংরা ৫০০-৬০০ টাকা, মলা মাছ আকার ভেদে ৪০০-৬০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৪৫০-৫০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, পাঙাস ১৫০-২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০-১৮০ টাকা, গ্রাস কার্প ১৫০-১৬০ টাকা, ছোট মৃগেল ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে মাংসের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকা, পাকিস্তানি কক ২৪০-২৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৪০০-৪৫০ টাকা, গরুর মাংস ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।গরুর মাংসের ব্যবসায়ী শেফায়েত উল্ল্যাহ বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের আগে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এরপর থেকে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

এদিকে, অভিজাত-উচ্চ মধ্যবিত্তের বাজার হিসেবে পরিচিত নগরীর কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে ইতোমধ্যে মিলতে শুরু করেছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। যে কোন ধরনের মৌসুমি সবজি নগরীর অন্যান্য বাজারের পাওয়ার আগেই এই বাজারে আসার ঐতিহ্য আছে।শুক্রবার কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে গ্রীষ্মকালীন সবজির আগমনী বার্তা পাওয়া গেছে, তবে পরিমাণে কম এবং দাম বেশি। ওই বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি কাঁকরোল ২২০ টাকা, পটল ও ঢেঁড়স ৬০ টাকা করে, করলা, উস্তা এবং কচুর লতি ৫০ টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।বিক্রেতা আল আমিনের দাবি, সরাসরি মাঠ থেকেই তার কাছে এসেছে এসব গ্রীষ্মকালীন সবজি। কুমিল্লা থেকে পটল ও আলু এবং সীতাকুন্ড ও দোহাজারি থেকে এসেছে অন্যান্য সবজি।বিদায়ী সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, বেগুন, সীতাকুন্ডের বড় টমেটো, হালিশহরের ছোট টমেটো, কচুর ছড়া, সীতাকু-ের শিমের বিচি এখনও দেখা গেছে। তবে চাহিদা এবং দাম উভয়ই কম বলে জানালেন বিক্রেতা কাশেম সওদাগর।হালিশহরের ছোট টমেটো বিক্রি করছি ২৫ টাকা কেজি। সীতাকু-ের বড় টমেটো বিক্রি করছি ৩০ টাকায়। ১৫ দিন আগে দাম প্রায় ডবল ছিল। এগুলো আস্তে আস্তে আর মানুষ খাবে না। সাপ্লাইও নাই।’ বলেন কাশেম সওদাগর গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ এখনও কিছুটা কম হলেও বাজারে শাক আসছে প্রচুর। নতুন করে আসা পাটশাক ও টক পাতা প্রতি আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাকও ঢেঁকিশাক প্রতি আঁটি ১৫ টাকা করে, কলমি ও কচু শাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা করে এবং কচুর লতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বিক্রেতা মো.বশির জানালেন, গ্রীষ্মকালীন এই শাকের দাপট শুরু হওয়ার পর কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজার থেকে বিদায় নিচ্ছে পালংশাক, কপিশাক, মূলাশাক, বাততোয়া শাক, লালশাক ও লাউয়ের আগা।কাজির দেউড়ি বাজারে গিয়ে শাকসবজির এমন চিত্র দেখা গেলেও গরীব-নিম্ন মধ্যবিত্তের বাজার হিসেবে পরিচিত আসকার দীঘির পাড়ের কাঁচাবাজারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সেখানে গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনও সেভাবে আসেনি। তবে গ্রীষ্মকালীন শাক এখানেও দেখা গেছে প্রচুর পরিমাণে।আসকার দীঘির পাড়ের বিক্রেতা আরাফাত বলেন, কাঁকরোল-পটল কিছু কিছু আসছে। কিন্তু দাম খুব বেশি। এই বাজারে এই দামে কেউ কিনবে না।

সারা বছরের মাছ হিসেবে পরিচিত কই, শোল, মাগুর, শিং মাছের দাপট এখনও বহাল আছে দুই বাজারেই।কাজির দেউড়ি বাজারে আনোয়ারা-পটিয়া থেকে আসা দেশি কই বিক্রি হচ্ছে বড়গুলো কেজিপ্রতি ৮০০ এবং ছোটগুলো ৬০০ টাকায়। শিং মাছ ৬০০, মাগুর মাছ ৭৫০ এবং শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।বিক্রেতা মো.ফারুক বলেন, এসব মাছ আমরা সারা বছরই বিক্রি করি। কিন্তু শীতকালে একটু বেশি চলে। এখন গরমে বিক্রি কিছুটা কমবে। বেশি চলবে সাগরের মাছ।মৌসুম ইলিশের না হলেও কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে সুস্বাদু এই মাছের কমতি নেই। প্রত্যেক ইলিশের ওজন এক কেজির উপরে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়। তবে ইলিশগুলো মিয়ানমার থেকে আসা বলে স্বীকার করলেন বিক্রেতা ইব্রাহিম।বাজারে এখন যেসব ইলিশ পাবেন সব বার্মিজ ইলিশ। আমাদের এখানে ইলিশের সিজন নাই। কিন্তু বার্মায় ইলিশের সিজন চলছে। সেখান থেকে আসছে। বলেন ইব্রাহিম। কাজির দেউড়ি বাজারে মাছ বিক্রেতা মো.সোহেল এক কেজির মতো লইট্যা মাছ নিয়ে বসে আছেন। এক কেজি দেড়শ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন এই বিক্রেতা।পরিমাণ এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লইট্যার সিজন শুরু হচ্ছে। তবে এখন খুব কম আসছে। আস্তে আস্তে বেশি ধরা পড়বে।

এ ছাড়া জীবিত রুই প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, মৃত রুই ৩০০ টাকা, মলা মাছ ৪০০ টাকা, চিতল প্রতি কেজি ৬০০টাকা, সাগরের লাল চিংড়ি মাথাসহ ৮৫০ টাকা, মাথা ছাড়া ৮০০ টাকা, রূপচাঁদার মধ্যে বড়গুলো ৮০০ টাকা, মাঝারি ৭৫০ টাকা এবং ছোট ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রিকশা মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, লাল পোয়া ২৫০ টাকা, তাজা কই কোরাল ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কাজির দেউড়ি বাজারে গরুর রানের মাংস (হাড় ছাড়া) ৬০০ টাকা, হাড়সহ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস ৭০০ টাকা, ছাগলের মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গরুর গোশত বিক্রেতা রফিক বলেন, মানুষ গরুর গোশত আর খাচ্ছে না। ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কে খাবে ? দাম কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না।খাসির মাংস বিক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, খাসির মাংসের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহেও আমরা ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকায় বিক্রি করেছি।এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, দেশি মোরগ ৩৯০ টাকা, পাকিস্তানি মোরগ ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।মুরগি বিক্রেতা মনসুর বলেন, দেশি মুরগি কম আসছে। সেজন্য দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকা বেড়েছে। দেশি মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা এবং ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম ডজনপ্রতি মাত্র ২০ পয়সার মতো কমেছে বলে জানালেন কাজির দেউড়ির বিক্রেতা ইকবাল।কাজির দেউড়ি বাজারে আসা গৃহিণী তাসলিমা জামান বলেন, নতুন যেসব সবজি এসেছে সেগুলো ফ্রেশ মনে হচ্ছে। সবজি আর শাক কিনলাম। বাঁধাকপি-ফুলকপিও কিনেছি। সিজন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো তো আর পাব না। মাছ-মাংসের দাম খুব বেশি।