ঝিনাইদহ জেলায় সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ১১৩ জন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। এতে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিতসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।্ গ্রামে নিয়োগকৃত ডাক্তাররা বদলি হয়ে বড় বড় শহরে চলে যাওয়ায় উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার সংকট হয়েছে। ডাক্তাররা কেউ গ্রামে থাকতে চান না। সাধারণ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দু’জন ডাক্তার দিয়ে চলছে শৈলকুপা উপজেলা হাসপাতাল টি।

সরকার গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাক্তার নিয়োগ দেন। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ গ্রামে বসে সরকারি চিকিতসা সেবা পাবে। এ ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো হয়। বছর আড়াই আগে ঝিনাইদহ জেলার ৬৭টি ইউনিয়নে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ জেলায় সব মিলিয়ে ৭৭ জন নতুন পাস করা ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগের পর ডাক্তারগণ নানা ওজর আপত্তি তুলে গ্রামে যান না। তারা উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতালে বসতে থাকেন। পরে সরকার ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডাক্তারদের বসার জন্য রুম বরাদ্দ করে। সেখানেও তারা যান না। পোস্টিং-এর পর থেকে তারা শহরে বদলির জন্য তদবির শুরু করেন।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানাগেছে, গ্রামে নিয়োগকৃত ১৩ জন ডাক্তারের মধ্যে এখন দু’জন কর্মরত আছেন। বাকী ১১ জন তদবির করে বদলি হয়ে চলে গেছেন বিভিন্ন। আবার কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকাতে গেছেন। শৈলকুপা উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য বলতে গেলে দু’জন ডাক্তার আছেন। অন্য দু’ জন অপারেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন প্রায় ৩’শ রোগী এ হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসার জন্য আসে। আউটডোরে কোনো ডাক্তার নেই।

উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সাবেক মেডিক্যাল এ্যাসিসট্যান্ট) দিয়ে হাসপাতাল চলছে। এক সময় শৈলকুপা উপজেলায় ইউনিয়ন ও উপজেলা হাসপাতাল মিলিয়ে ২২ জন ডাক্তার কর্মরত ছিলেন। এ হাসপাতালে ওষুধের অভাব আছে। আগত রোগীদের অভিযোগ বাইরে থেকে ওষুধ কিনে চিকিতসা করাতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের বেহাল দশার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

শুধু শৈলকুপা নয়, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা হাসপাতালের একই অবস্থা। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ১৫ জন কনসালট্যান্ট ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী শৈলকুপায় ১৬ জন, কালীগঞ্জে ১৬ জন, হরিণাকুন্ডুতে ১৮ জন, কোটচাঁদপুরে ১৪ জন ও মহেশপুরে ২৮ জন ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। আবার খাতা কলমে ডাক্তার থাকলেও বাস্তবে নেই। তিনি সুবিধা মতো স্থানে ডেপুটেশনে কাজ করছেন। ঝিনাইদহ জেলার ১৩টি সাব সেন্টারের মধ্যে ৯টিতে ডাক্তার নেই। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে সহকারী সার্জনের ২০টি পদ আছে। কাগজে কলমে ৫ জন ডাক্তার নিয়োজিত থাকলেও বাস্তবে নেই। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রতিদিন আউটডোরে হাজার থানেক রোগী চিকিতসা সেবা পেতে আসে। ৪ জন ডাক্তার তাদের সেবা দিতে হিমশিম খান।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাক্তার রাশেদা সুলতানা জানান, গ্রামে নিয়োগকৃত ডাক্তারগণ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া বা ঝিনাইদহ জেলা সদরে চলে আসায় উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি কয়েক দিন হলো সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিয়েছেন। শূন্য পদ গুলোতে ডাক্তার নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি বলবেন।