রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সব ধরনের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার আবদুল হক কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জনগণের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে আপনাদের (জনপ্রতিনিধি) অবশ্যই আন্তরিকভাবে এবং সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনারা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারেন না।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন যাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে জমিদারের মতো মনোভাব দেখান। তিনি বলেন, ‘অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ভোট আদায়ের লক্ষ্যে ভোটের আগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন, অথচ নির্বাচিত হওয়ার পরক্ষণেই তাঁদের মনোভাব বদলে যায়।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, এটা উচিত নয়। জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনের পরও একই মনোভাব থাকা উচিত। আবদুল হামিদ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সচেতন হতে সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাধারণ মানুষকেও তাদের নেতা নির্বাচনে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, আমি বিশ্বাস করি, এটা হলেই তা দেশকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সচেতন হলে সরকারি কর্মকর্তারাও সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হবেন। নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যদিও তিনি বঙ্গভবনে বসবাস করেন, তবু তাঁর মন সব সময় এই হাওর অঞ্চলেই পড়ে থাকে; যেখানে তিনি বেড়ে উঠেছেন। তিনি সব সময়ই এই এলাকার জনগণের কথা ভাবেন।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আল্লাহ যদি আমাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন আমি আবার হাওর এলাকায় ফিরে আসব।’ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হাওর অঞ্চলের লোকদের প্রতি তাদের সন্তানদের শিক্ষিত হতে উৎসাহদানেরও আহ্বান জানান, যাতে তাঁরা এ অঞ্চলের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। তিনি আরো বলেন, ‘এটা প্রতিযোগিতার যুগ, আপনাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলুন, যাতে তা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাদের সহায়ক হয়। এতে হাওরের উন্নয়ন হবে।’

হাওর অঞ্চলের লোকদের সমস্যা সম্পর্কে আবদুল হামিদ বলেন, এখানে টিকে থাকার জন্য তাঁরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এবং বন্যা ও ভাঙনের কারণে এ অঞ্চলের অনেক গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, গত ১৪ বছরে হাওর অঞ্চল সড়ক ও অবকাঠামো সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে, যা এখানকার মানুষের জীবনকে করেছে অনেক সহজতর।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, আফজাল হোসেন ও সোহরাব হোসেন এমপি এবং কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মিঠামইনে তমিজা খাতুন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনতলাবিশিষ্ট একটি নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। তিনি ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো, একটি মার্কেট ও বিভিন্ন উন্নয়নকাজের স্থানও পরিদর্শন করেন। রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজের মান নিশ্চিত করা ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।