ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরায় মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়এ সময় জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।মাগুরায় উপ-নির্বাচনে বিএনপি ভোট চুরি করে এবং এই দলের নেত্রী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চুরির দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন বলেও জানন তিনি।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-খুন ও দুর্নীতির রাজত্বে ফিরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের পতাকা তলে সমবেত হোন, আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করুন।একইসঙ্গে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জয়ী করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জনসভায় আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হয় গোটা স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের আশপাশের রাস্তাগুলোতে ছিল হাজারো মানুষ। বাদকদলের বাদ্যযন্ত্রের তালে-তালে সর্বস্তরের মানুষ নেচে-গেয়ে শহরকে উৎসবে পরিণত করেন।মাগুরা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী; রাজবাড়ী পাংশা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমাবেশে সমবেত হন মানুষজন।আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে আশা করি নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে মানুষের সেবা করার সুযোগ দেবেন।তিনি বলেন, দেশ যেন দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়, সেলক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়া।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাবার আর্দশ অনুসরণ করে বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জীবন উৎসর্গ করবো। যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। বাবার মতো হাসিমুখে বুকের রক্ত দিয়ে আপনাদের সেবা করবো।তিনি বলেন, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না। কারো কাছে মাথা নতো করি না।১৫ আগস্ট একমাত্র বোন রেহানা ছাড়া বাবা-মাসহ সবাইকে হারানো শেখ হাসিনা বলেন, শোক ব্যথা বুকে নিয়ে সব কষ্ট সহ্য করে একটা কারণে দেশে এসেছি- সেটা আপনাদের সেবা করার জন্য। জাতির জনক এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের একটাই আদর্শ দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।২০০১ সালে বিএনপির বিজয়ী হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। বিএনপি কি করেছে? ২০০১ সালে বাংলাদেশের গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রির মুছলেকা দিয়ে ‘র’ ও আমেরিকার ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় আসে।তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে ’৯৬-এর আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে, সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, মানুষের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে, ফসল লুট করেছে, খুন এবং দুর্নীতি করেছে।

যখনই দেশের উন্নতি করতে যাই- তখনই একটা শ্রেণি বাধা দেয়, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।বিএনপি আমলে মাগুরা উপ-নির্বাচন ও ৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি জাতীয় নির্বাচনে ভোট চুরির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভোট চুরি করার কারণে গণআন্দোলন হয়। আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল বাংলার জনগণ।চুরির অপরাধে যাদের জনগণ ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে তারা ক্ষমতায় আসলে দেশকে আবারও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।মাগুরা সফরে এসে ১৯টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন এবং ৯টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাগুরায় খালি হাতে আসেনি। উপহার নিয়ে এসেছি।

মাগুরাবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আপনাদের কাছে একটা দাবি, সবার কাছে আবেদন, এখানে যেন কোনো রকম সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গির স্থান না পায়।অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের প্রতি খেয়াল রাখবেন, তারা যেন বিপথে না যায়।বিপথগামীরা সঠিক পথে ফিরতে চাইলে সব সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ভালো হতে চায় তাদের জীবন-জীবিকার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব আমরা করবো। সব ধরনের সহযোগিতা দেবো।জনসভায় মাগুরার নেতা প্রয়াত আছাদুজ্জামানের ছেলে ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি রেললাইন, মেডিকেল কলেজ এবং আইনজীবী সমিতি ও প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান।পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, মাগুরাবাসীর দাবি তারা নাকি রেল লাইন দেখেননি, দিতে হবে। রেল লাইন যাতে হয় সে ব্যবস্থা করবো। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ কুন্ডুর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল ওয়ায়াহাব, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের নাজমা আখতার ও অপু উকিল, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।