প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান তামিমের। বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রায় সব ব্যাটিং রেকর্ডই নিজের করে রেখেছেন তামিম ইকবাল। শনিবার ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে পূরণ করলেন নিজের ১০ হাজার আন্তর্জাতিক রানও।আজকের ম্যাচের আগে তিন ধরনের ক্রিকেটে তামিমের রান ছিল ৯ হাজার ৯৯৯। আজ প্রথম রানটি নিয়েই তিনি পা রাখলেন ১০ হাজার রানের ঘরে। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি তাঁর। তামিমের ব্যাটে ভালো শুরু পেয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে তামিমের রান ৩ হাজার ৬৭৭। টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজার ২০২। ওয়ানডেতে ইতিমধ্যেই ৫ হাজার রান পেরিয়ে গেছেন। দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫ হাজার ১২০-এ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান শচীন টেন্ডুলকারেরÑ৩৪ হাজার ৩৫৭। কমপক্ষে ১০ হাজার রান করা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন ১২ জন ভারতীয়। তাঁরা হলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলী, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, বীরেন্দর শেবাগ, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি, সুনীল গাভাস্কার, যুবরাজ সিং, ভিভিএস লক্ষ্মণ, দিলীপ ভেংসরকার ও গৌতম গম্ভীর।শ্রীলঙ্কান আছেন ৮ জনÑকুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, সনাৎ জয়াসুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, তিলকরতেœ দিলশান, মারভান আতাপাত্তু, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ইনজামাম-উল-হক, ইউনিস খান, মোহাম্মদ ইউসুফ, জাভেদ মিয়াঁদাদ, সেলিম মালিক, সাঈদ আনোয়ার, শহীদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাফিজরা পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেছেন কমপক্ষে ১০ হাজার রান।

তামিম ১০ হাজার রান পূরণের দিনে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলতে পারেন কি না, তা-ই দেখার।টেস্ট সিরিজের সাফল্যের ছন্দটা ওয়ানডেতেও টেনে আনল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচের নিষ্পত্তি হওয়া এখনো ঢের বাকি। কেবলই ইনিংসের মাঝপথ। তবে ডাম্বুলায় বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে পেয়েছে ভালো পুঁজি। মাশরাফির দল ৫ উইকেটে ৩২৪ রান করেছে। বাংলাদেশের ইনিংসের মূল কারিগর তামিম। তামিম করেছেন ১২৭ রান। বাঁ হাতি ওপেনার দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন দুজন। সাকিব আল হাসান করেছেন ৭২। সাব্বির রহমান করেছেন ৫৪। সৌম্য সরকার ১০ রান করে ফিরে যাওয়ার পর সাব্বিরের সঙ্গে ৯০ রানের জুটি গড়েন তামিম। তাতে সাব্বিরই ছিলেন চালকের ভূমিকায়। ৫৬ বলের ইনিংসটায় সাব্বির মেরেছেন চোখে লেগে থাকা ১০টি চার। পরপর দুই ওভারে সাব্বির ও মুশফিকুর রহিম (১) ফিরে গেলে একটু চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখানেই জুটি বাঁধেন তামিম-সাকিব। ১৪৪ রানের জুটিটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ১০৯ রান। কেবল শেষ ৬ ওভারে এসেছে ৮৩ রান। মোসাদ্দেকের ৯ বলের ২৪ রানের ছোট কিন্তু ঝোড়ো ইনিংসটা ছিল এই ঝড়ের নিন্মচাপ!

তাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা নতুন করে লেখাল। শুরু থেকে একপ্রান্ত ধরে রেখে খেলে তামিমই রাখলেন মূল ভূমিকা। ১৪২ বলের ইনিংসটায় মেরেছেন ১৫টি চার, ছয় একটি। ৪৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশকে দিয়ে গেছেন ৩০০-র গতিপথ।অবশেষে উত্তরটা তামিম খুঁজে পেয়েছেন ডাম্বুলায় এসে। সেঞ্চুরির তৃষ্ণাটা মেটাতে বাঁহাতি ওপেনার শুরুতেই এগিয়েছেন ধীর-লয়ে। প্রথম ৭ বলে রান ২। জড়তা কাটিয়েছেন লাহিরু কুমারাকে প্রথম বাউন্ডারিটা মেরে। ফিফটি করেছেন ৭৬ বলে। পরের ৫০ করতে লেগেছ ৫১ বল। যেটি তাঁর ৮ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৭তম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয়। তিন সংস্করণ মিলিয়ে প্রথম বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান করার দিনটা দারুণভাবে স্মরণীয় করে রাখলেন তামিম। ঠিক চার বছর আগে শ্রীলঙ্কায় আগের সফরে হাম্বানটোটায় ফিফটির গোলকধাঁধা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তামিম। তিন বছরের সেঞ্চুরি-খরা ঘোচানোর সেই ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ হেরেছিল। আজ তামিম নিশ্চয়ই জয় দিয়েই ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন।