হাটহাজারী উপজেলার উত্তরের ১নং ফরহদাবাদ ইউনিয়নে মন্দাকিনী মেলা ও পূর্ণ ¯œানে হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছিল। শিব মন্দিরে পুজা, কবি গান, গীতাপাঠ, কৃর্ত্তন ও ধর্মীয় আলোচনা সভা সহ নানা ধরণে কর্মসূচী মহাসমারোহে রবিবার শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছর ন্যায় এ বছরও মধূ কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ মেলা ও ¯œান অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে ¯œান ও মেলা কমিটির পক্ষ থেকে দু’দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শিব মন্দিরে পুজা, কবি গান, গীতাপাঠ, ধর্মীয় পাল্টা কীর্ত্তন, ধর্মীয় আলোচনা সভা ও পূর্ণ ¯œান। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উপজাতিসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীর সমাগমে ঘটে। এতে করে মেলাস্থল মুখরিত হয় ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের পদচারণায়। তবে মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।

গত রবিবার (২৫ মার্চ) থেকে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন মেলাস্থলে উপস্থিত হয়ে পূর্জা অর্চনা শুরু করে। সূর্য উদয়ের পর তিথি শুরু হলে পূর্ণার্থীরা মন্দাকিনি খালে পূর্ণ ¯œান শেষ করে প্রয়াত পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও জ্ঞ্যাতি-বর্গের উদ্যেশে মন্ত্র পাঠ করে পিন্ড দান করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেলাস্থলে লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। মেলায় যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ, মহিলা পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়ন ছিল। সীতাকুন্ডের ব্যাসকুন্ডের পাহাড়ি জলধারা থেকে মন্দাকিনী খাল উৎপত্তি হয়ে পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী গ্রাম হয়ে হালদা নদীর সাথে মিশেছে। মন্দাকিনী খালটি এক ¯্রােতী। সারা বছর এ খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। হালদা নদীর সংযোগস্থলে অমাবস্যা পূর্ণিমা তিথিতে নদীর জোয়ার বৃদ্ধি পেলে আংশিক জোয়ারের পানি খালে ঢুকে। মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ খালে ¯œান করতে পারলে মহাপূর্র্ণ্যরে অধিকারী হওয়া যায় বলে সনাতনী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস। এক সময় এ মেলা পক্ষকাল ব্যপী অনুষ্ঠিত হত। কোন সময় থেকে এ মেলা ও পূর্ণ ¯œান শুরু হয় তা বর্তমান প্রজম্মের কারো জানা নেই। মেলায় সাংসারিক প্রয়োজনের যাবতীয় দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। সংসারের বার্ষরিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতেও অনেক লোকজন মেলায় আসে। এক সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনও ব্যাপকভাবে সমাবেত হত। তখন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মেলার এক স্থানে বসে পিন্ডচারন করত। কালের বিবর্তনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আগমন এখন হারাতে বসেছে।

এছাড়া জনশ্র“তি আছে, ব্রিটিশ সরকার মেলায় লোক সমাগমের অবস্থা অনুধাবন করে মেলার পূর্বদিন, মেলারদিন ও মেলার পরেরদিন অতিরিক্ত ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল নাজিরহাট শাখা লাইনে। তখন যানবাহনের অপ্রতুলতা ছিল। বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকজন দ্রুত মেলায় আসতে পারে বলে অতিরিক্ত ট্রেন নাজিরহাট শাখা লাইনে মেলার দিন চলাচল করে না। পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ির গাড়িটানা থেকে আগত ষাটর্দ্ধো অঞ্জলী ত্রিপুরা এ প্রতিবেদককে জানান, মন্দাকিনী মেলা সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে মিলন মেলা। আমরা প্রতি বছর মেলার জন্য অপেক্ষা করি। তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার পূর্ণার্থী মেলায় এসেছেন। মেলায় গীতা পাঠ করেন শ্রীমৎ উজ্জ্বল ব্রহ্মচারী। এছাড়া এ বছর মেলায় এক উপজাতির বিয়ে ও এক প্রয়াত ব্যক্তি কর্ম সম্পন্ন হয়েছে। খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে আগত আরেক তরুণ পূর্ণার্থী হৃদিতা ত্রিপুরা বলেন, মেলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখে আমরা খুশি। তবে খালে পানির পরিমান কম থাকায় বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়েছে পূর্ণার্থীদের। তিনি আরো বলেন, যদি কমিটি পূর্ণার্থীদের কথা চিন্তা করে আরো কিছু কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহন করা যেত তবে পূর্ণার্থীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেত।মেলা পরিচালনা কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক ছোটন দাশ জানান, মেলায় সর্ব সম্প্রদায়ের ভক্তদের আগমণ ঘটেছে। অস্বচ্ছল ও দরিদ্রস্থরা তাদের প্রয়াত মা-বাবার উদ্দ্যেশে পিন্ড-দান করতে এ তীর্থে আসেন। এছাড়া যারা পরকালে তাদের সুখ-শান্তির জন্য সুদুর ধর্মীয় গয়া কাশিতে গিয়ে তীর্থ করতে পারে না সেই সব ভক্তরা এখানে এই তীর্থে স্নান তর্পণ ও পিন্ড-দান করেন। এই মহাপুর্ণ্য তীথিতে অগণিত ভক্ত মন্দাকিনী এলাকায় সমাবেত হয় তর্পণ ও পূর্ণ ¯œান করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, সনাতন সম্প্রদায়ের অস্বচ্ছল ও হতদরিদ্ররা যারা পরকালে সুখ শান্তির জন্য পবিত্র ধর্মীয় স্থান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গয়া-কাশিতে গিয়ে প্রয়াত মা-বাবার জন্য মহাতীর্থে পিন্ডদান করতে পারেনা, বেশিরভাগ এমন হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের পদচারণা হয়েছে মেলায়। হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রাদায়ের লোকজন মারা গেলে তাদের রেখে যাওয়া বংশধর গণ ভারতের গয়া-কাশিতে গিয়ে তীর্থ করে প্রয়াতদের জন্য পিন্ড দিতে হয়। পিন্ড দিলে মৃত্যুর পরে প্রয়াতরা যদি কোন পাপ স্থানে জন্ম নেয় সেখান থেকে তারা উদ্ধার হয় বলে মানুষের ধারণা। কোন দরিদ্র পরিবার যদি ভারতের গয়ায় যাওয়ার সামর্থ না থাকে তাহলে মন্দাকিনী তীর্থে গিয়ে পূর্ণ ¯œান তর্পন করে পিন্ড দান করলে প্রয়াত পিতা মাতা উদ্ধার হয় বলে ধারণা রয়েছে। এমন ধারণা থেকে হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মন্দাকিনী মেলা ও পূর্ণ ¯œানে করতে আসা। এদিকে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল উদ্দিন জাহাংগীর এর কাছে আইন-শৃংঙ্খলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মেলার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে ।