বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপি আগের অবস্থানেই আছে। হেফাজতের সব নয়, কিছু কিছু দাবির সঙ্গে বিএনপি একমত ছিল; এখনো সেই অবস্থানেই আছে। বরং হেফাজতকে বশে এনে কাছে টানার চেষ্টা করছে সরকার। এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান ডাবল স্ট্যান্ড (দ্বৈত নীতি) না।মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে হাওর অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল দেশের হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, কৃষকেরা তাঁদের একমাত্র ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা। এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও কিশোরগঞ্জ জেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বিএনপির মহাসচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি চুক্তি করতে হবে। বাঁধ দিয়ে ভারত এসব নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকিয়ে দিচ্ছে।

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে হাওর অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো মন্ত্রীও ওই এলাকায় যাননি। সেখানে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে খুবই নীরবে এক বিশাল ও ভয়ংকর দুর্যোগ ঘটে গেছে এপ্রিল মাসের শুরুতে। বিস্তৃত হাওর অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানিয়েছেন যে ফসল নষ্ট হওয়ায় তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলের পুরোনো কৃষিঋণ মওকুফ, বিনা মূল্যে সার, বীজ বিতরণসহ কয়েকটি দাবি জানান তিনি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তিনি নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন বলে জানান। স্থানীয় নেতৃবৃন্দকেও দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাধারণত বৈশাখ মাসের মাঝামাঝিতে হাওরাঞ্চলে বন্যা হয়, কিন্তু এবছর নির্দিষ্ট সময়ের আগে বন্যা হওয়ায় কৃষকরা তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা।

তিনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও অতিবৃষ্টিতে সংস্কারহীন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার হাওরাঞ্চলে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, এসব এলাকায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যাতে প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো।হাওর এলাকার লাখ লাখ লোক মানবিক বিপর্যয়ে সম্মুখীন হয়েছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কৃষকের ঘরে সারা বছর ১৫/২০ মণ ধান/চাল মজুদ থাকতো, সেই কৃষক এখন তিন/চার কেজি চালের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ছোট ছোট বাচ্চারা খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।সরকারের ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো ও অপ্রতুল অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির কথা বলা হলেও তা দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে অনেক দুর্নীতি হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলেই হাওরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশায় তারা নির্বিকার।পুরাতন কৃষিঋণ মওকুফের দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, সাধারণত ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওসহ মহাজনী ঋণ নিয়ে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করে। এবার ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঋণের চাপে এবং পরিবার পরিজনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দু:চিন্তায় তাদের মাথায় আকাশে ভেঙে পড়েছে। এরইমধ্যে নেত্রকোণায় একজন আত্মহত্যা করেছেন, আরেকজন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

হাওরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা, ২. প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠন করে আগামী ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা চালানো ৩. পুরাতন কৃষি ঋণ মওকুফ, ৪. সুদবিহীন নুতন কৃষিঋণ বিতরণ, ৫. কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, তেল ও কৃষি উপকরণ বিতরণ, ৬. ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো আগামী ফাল্গুন মাসের আগেই পুন:নির্মাণ, ৭. আগামী বোরো ফসল ওঠার আগেই নদীগুলো ড্রেজিং এবং ৮. ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের জন্য ভারতের সঙ্গে ন্যায্য চুক্তি।সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আযাদ প্রমুখ।