দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বেশি কথা বলতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। যদি আইনের শাসন থাকতো তবে অন্যান্য দেশের প্রধান বিচারপতিদের মতো কথা বলতেন না বলেও জানান তিনি। রবিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও প্রথম ব্যাচের নবীনবরণ অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলানয়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধান সমুন্নত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বিচার বিভাগ। যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন করা হয়, উচ্চ আদালত তা বাতিল করতে দ্বিধা করবে না।

দেশের প্রশাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্বের আভাস দিয়ে বক্তব্য রেখে সম্প্রতি আলোচনায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।এরই প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, কোনো দেশের প্রধান বিচারপতিরা বিচারকার্য ছাড়া সরকারের প্রতি এত উষ্মার কথা প্রকাশ্যে বলে না। কোনো ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পরামর্শ দিয়ে ছিলেন মন্ত্রী।রাজধানীতে এক আয়োজনে এ বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই বলেই তাকে বেশি কথা বলতে হয় তিনি জানালেন।সংবিধান সমুন্নত রাখতে উচ্চ আদালত সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও প্রধান বিচাপতি জানিয়ে দেন। বলেন, উচ্চ আদালতের রায় সবাই মেনে নিলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হবে।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি আইন, সাক্ষ্য আইনসহ অনেক আইনকে যুগোপযুগী করার আহবান জানান তিনি।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের মধ্যে ভূমি আইন হচ্ছে আইনের মূল স্তম্ভ। ভূমি আইনের জটিল বিষয়ে অনেক আইনজীবীই জ্ঞাত নয়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ ভূমি আইন ব্রিটিশ শাসনামলে করা, যার মধ্যে অনেকগুলো ত্র“টিপূর্ণ। বর্তমানে অনেক ভূমি আইন সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকৃত আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমিক ও কৃষকরা। মাটি ও মানুষের পক্ষে আইন জানতে হলে ভূমি আইন অতীব জরুরি।প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন উন্নত দেশ হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনের শাসনের সঠিক বাস্তবায়ন। আইনের শাসন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মেনে চললে সভ্য ও উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব। এজন্য আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য আইনের শাসনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে বিচার বিভাগের অধীনস্থ বিভাগসমূহে নানা সমস্যা রয়ে গেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন ভূমি সংক্রান্ত নানা আইনের অজ্ঞতার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই ভূমি আইন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য প্রদান করেন ট্রেজারার অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাস। এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও শিক্ষাথীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।