বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অসঙ্গতিগুলো দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।বুধবার সচিবালয়ে তার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সংশোধিত হয়ে ৫৭ ধারায় যুক্ত হবে। ৫৭ ধারায় আটক সাংবাদিকরা ন্যায় বিচার পাবেন।এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন আনিসুল হক।প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেবেন না আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।কিছু বলার থাকলে প্রধান বিচারপতির সামনে গিয়েই বলবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের টানাপড়েন নিয়ে প্রধান বিচারপতির সর্বশেষ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুখে কুলুপ দেওয়ার কথা বলেন আনিসুল হক।তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, আমার কথা হচ্ছে যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য রেখেছেন আমি সেই সম্বন্ধে কোনো কথাই বলব না। যেসব বক্তব্য উনি (প্রধান বিচারপতি) দিয়েছেন সেটার ব্যাপারে আপনারা (গণমাধ্যম) সেটা বিচার করবেন, দেখবেন। আমার যদি কিছু বলতে হয়, তাহলে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সামনে গিয়েই আমি বলব।প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সাম্প্রতিক নানা বক্তব্যে রাষ্ট্রের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েনের প্রকাশ ঘটেছে।নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে গত মাসের মাঝামাঝিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে পাশ কাটানো হয়েছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমঝোতার মাধ্যমেই চলতে হবে। পরস্পরকে দোষারোপ করে একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না।

এর মধ্যেই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিচারপতি সিনহাকে ইঙ্গিত করে বলেন, কোনো দেশে প্রধান বিচারপতিরা ‘প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না’তার প্রতিক্রিয়ায় গত ৩০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়’ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বলেই তাকে কথা বলতে হচ্ছে।নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে টানাপড়েনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে মঙ্গলবার বগুড়ায় এক অনুষ্ঠানে এস কে সিনহা বলেন, বিচার বিভাগকে পঙ্গু করার চেষ্টা তিনি মেনে নেবেন না।

তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রকাশ্যে কিছু না বলার কথা জানান আইনমন্ত্রী। বাংলাদেশ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচারের যে তথ্য গ্লোবাল ফাইনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশ করেছে তার সত্যতা মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে কিন্তু এন্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট আছে। এই রিপোর্টের সত্যতা পাওয়ার পরে তার মধ্যে যদি এ আইনে কোনো অপরাধ পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৮৯৭ কোটি ডলার (৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি) পাচার হয়েছে বলে সোমবার প্রকাশিত ‘ইলিসিট ফাইনানশিয়াল ফ্লোজ টু অ্যান্ড ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৫-২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তথ্য দেয় জিএফআই।ওয়াশিংটনভিত্তিক এই গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল- এই ১০ বছরে বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়ায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।বৈদেশিক বাণিজ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও অন্যান্য অবৈধ পথে এই অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনের ভাষ্য ।