ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন এ তথ্য জানান।এর আগে দুপরে শুধু উপকূলীয় এলাকায় ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলে দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ঢাকার সদরঘাট থেকে দূরপাল্লার সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আজ সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে ৩৭টি রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত জারি থাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ছোট-বড় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালীসহ সব রুটের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গত মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোরা পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ছাড়াও উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

এ ছাড়া মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৫ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।ঘূর্ণিঝড় মোরাউপকূল অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পাবাংলাদেশ নৌ পরিবহন বাংলাদেশ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা জানান, লঞ্চ ও স্টিমারসহ সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকাসহ দেশের অন্য অঞ্চলে ফেরি চলবে।খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলসমূহের নদীবন্দরগুলোকে দুই (০২) নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এসব অঞ্চলের উপর দিয়ে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মোরা মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।সকালে আরও উত্তর দিকে সরে বাংলাদেশ উপকূলের ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর জন্য একই বিপদ সংকত রয়েছে।এছাড়া পায়রা ও মংলা বন্দর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বিপ ও চরগুলোতে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।