ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর দুই গোলে জুভেন্টাসকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা অক্ষুণ্ন রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কার্ডিফের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে পর্তুগীজ তারকার গোলেই প্রথমার্ধে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু মারিন মানজুকিচের সমতায় সেই লিড বেশীক্ষন ধরে রাখতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে একেএকে কাসেমিরো, রোনাল্ডো ও মার্কো আসেনসিওর গোলে গত চার বছরে তৃতীয় ও সব মিলিয়ে রেকর্ড ১২বারের মত ইউরোপীয়ান শিরোপা ঘরে তুলে গ্যালাকটিকোরা। আর এই জয়ে রোনাল্ডো রিয়ালের হয়ে চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগে জয়ী হয়ে পঞ্চমবারের মত শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লীগ শেষ করেছে। আর একইসাথে চির প্রতিদ্বন্দ্বী লিয়নেল মেসির রেকর্ড পঞ্চমবারের ব্যালন ডি’অর জয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেছে সিআর সেভেন।

রিয়ালের হয়ে ঠিক ৬০০ গোল করা ও দেশের হয়ে অসাধারণ ফর্মে থাকা রোনাল্ডো ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘পরপর দুই বছর প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জিততে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। মৌসুমটা আমি দারুনভাবে শেষ করেছি। এটা আরেকটি রেকর্ড, আর এই রেকর্ড খেলোয়াড়দের প্রাপ্য ছিল।’ রিয়ালের প্রধান কোচ হিসেবে মাত্র ১৭ মাসের মেয়াদে প্রথম ম্যানেজার হিসেবে পরপর দুটি ইউরোপীয়ান শিরোপার গর্বিত মালিক এখন জিনেদিন জিদান। এর আগে ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে এসি মিলানের হয়ে আরিগো সাচ্চি পরপর দুটি শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে জিদান বলেছেন, খেলোয়াড় ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবটির জন্য এটি একটি অনন্য জয়। আমি দারুণ খুশি। কারণ লা লিগা কিংবা চ্যাম্পিয়নস লীগ জয় করা এত সহজ কাজ নয়। এই বছর আমরা এটা করে দেখিয়েছি। এর সাথে আমাদের কঠোর পরিশ্রম ও সংকল্প জড়িত ছিল।
এই জয়ের মাধ্যমে ১৯৫৮ সালের পরে প্রথমবারের মত রিয়াল একই বছর লা লিগা ও ইউরোপীয়ান কাপের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলো। এর আগেই অবশ্য রিয়াল ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ও ইউরোপীয়ান সুপার কাপের শিরোপাও জিতেছে।
জিদানের উচ্ছাসের দিনে তার প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসের কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি ছিলেন ততটাই হতাশ। চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে সর্বোচ্চ সাতবার পরাজিত হবার দুঃখ যেন কিছুতেই ভুলতে পারছেন না আলেগ্রি। এর ফলে ক্লাবের রেকর্ডের খাতায় ব্যর্থতার পাল্লাটাও ভারী হচ্ছে। প্রথমবারের মত ছাদ ঢাকা স্টেডিয়ামের কন্ডিশনটাও ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। আর তারই ধারাবাহিকতায় ইতিহাসে প্রথমবারের মত ট্রেবল জয়ের সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে। ৬৬ মিনিটে আন্দ্রে বারজাগলির স্থানে মাঠে নামা হুয়ান কুয়াড্রাডো ৭২ ও ৮৪ মিনিটে পরপর দুটি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে বাকি সময়টা জুভেন্টাসকে ১০জন নিয়ে খেলতে হয়েছে। আর এই পুরো সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচ শেষে হতাশ জুভেন্টাস অধিনায়ক গিয়ানলুইগি বুফন বলেছেন, আমরা মনে করেছিলাম ম্যাচ জয়ে আমরা যথেষ্ঠ ছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা কেমন খেলেছি তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। দ্বিতীয়ার্ধের পারফরমেন্সে এই জয়টা রিয়ালের প্রাপ্য ছিল। তারা তাদের মান দেখিয়েছে। এই ধরনের ম্যাচে যে ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন তার সবকিছুই আজ রিয়ালের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিল।

ম্যাচের শুরু থেকে অবশ্য জুভেন্টাসের পরপর কয়েকটি আক্রমনে রিয়াল কিছুটা পিছু হঠেছিল। গঞ্জালো হিগুয়েইনের দুটি প্রচেষ্টা আটকাতে বাধ্য হন কেইলর নাভাস। মিরালেম পানিকের হাফ-ভলি মাদ্রিদ গোলরক্ষক এক হাতে রক্ষা করতে বাধ্য হন। তবে ২০ মিনিটে ডান দিক থেকে ডানি কারভাজালের সাথে বল আদান প্রদান করে রোনাল্ডোর শট যেভাবে রিয়ালকে এগিয়ে দিয়েছিল তাতে মূলত বুফনের কিছুই করার ছিল না। লিওনার্দো বনুচ্চির ডিফ্লেকশনে বুফনের আসলে ঐ বল ধরার সাধ্যও ছিলনা। এই গোলের মাধ্যমে ১৯৯২ সালের আধুনিক চ্যাম্পিয়নস লীগের যুগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে পরপর তিনটি ফাইনালে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রোনাল্ডো। ২৭ মিনিটে বনুচ্চির ফ্লাইটেড পাস থেকে এ্যালেক্স সান্দ্রো হয়ে হিগুয়েইনের কাছে বল আসলে মানজুকিচের কাছে বাড়িয়ে দেন এই আর্জেন্টাইন। ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত ভলিতে অনেকটা এগিয়ে আসা নাভাসকে পরাস্ত করলে ম্যাচে সমতা ফেরায় ইতালিয়ান জায়ান্টরা।

কিন্তু বিরতির পরে পুরো চিত্রটাই ছিল জিদান শিষ্যদের ঘিড়ে। ৬১ মিনিটে কাসেমিরো আবারো এগিয়ে দেন রিয়ালকে। ২৫ গজ দুর থেকে এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের জোড়ালো শট সামি খেদিরার হিলে লেগে পোস্টে গেলে তা আটকানোর সাধ্য ছিলনা বুফনের। তিন মিনিট পরে ডানদিক থেকে লুকা মোদ্রিচের বাইলাইন ক্রসে রোনাল্ডো পোস্টের খুব কাছে থেকে বল জালে জড়ালে রিয়ালের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। এই নিয়ে টুর্নামেন্টে ১২তম ও সব মিলিয়ে ১০৫তম গোল করেছেন রোনাল্ডো। কাফ ইনজুরির কারনে গত ২৩ এপ্রিল থেকে মাঠের বাইরে থাকা কার্ডিফের ঘরের ছেলে গ্যারেথ বেল শেষ ১৫ মিনিট করিম বেনজেমার স্থানে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ৮২ মিনিটে ইসকোর স্থানে মাঠে নামা মার্কো আসেনসিও শেষ মিনিটে মার্সেলোর সহযোগিতায় দলের পক্ষে চতুর্থ গোলটি করলে রিয়ালের বড় জয় নিশ্চিত হয়।