চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনায় এমভি নাসরিন ১ লঞ্চডুবিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।রায়ে নিহতদের প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এবং আহত অবস্থায় বেঁচে থাকা একজনকে এক লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী।আদালতে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে লড়া মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের পক্ষে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী ও সুব্রত চৌধুরী। অপরদিকে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, অ্যাডভোকেট রাফসান আলভী ও ইশরাত হাসান।

এদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান।মামলার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ২০০৩ সালের ৮ জুলাই এমভি নাসরিন ১ লঞ্চ ডুবিতে নিহত হন ১১০ জন, নিখোঁজ হন ১৯৯। ওই নৌ দুর্ঘটনায় লঞ্চটির মালিকও নিহত হন। এরপর একই বছর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক লঞ্চডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ জনের তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকা অনুযায়ী নৌ-দুর্যোগ ট্রাস্টি বোর্ড নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। যার পরিমাণ ৭০ লাখ টাকার ওপর।কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের দেওয়া ক্ষতিপূরণ অপ্রতুল দাবি করে ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে নিহত ১২১ জনের পরিবারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ মামলা করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। মামলায় ২৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

এরপর ২০১২ সালে সেই মামলা বদলি হয়ে ঢাকার সপ্তম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে যায়। এই আদালত ২০১৬ সালের ২ ফেব্র“য়ারি রায় দেন। রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা দিতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বিবাদীরা জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ চেয়ে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন জানান। আদালত ওই আবেদন খারিজ করে ক্ষতিপূরণের রায় বহাল রাখেন।এ আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ-সহ বিবাদীপক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে। হাইকোর্ট পরদিন ‘নিম্ন আদালতের রায় কেন বাতিল ও রদ করা হবে না’ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে ফের ক্ষতিপূরণের রায় দেন।