বিভিন্ন অপরাধের জন্য দ্রুত বিচার আইনে সাজার মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আইন-শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) সংশোধনী আইন-২০১৭ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। এ আইনে রাস্তা অবরোধসহ ৯ ধরনের অপরাধ করলে সাত বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ আইনে সর্বোচ্চ ৫ বছরের শাস্তি দেওয়া হতো। জাতীয় সংসদে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন- ২০১৭’ এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত বিচার আইনের ৪(১) ধারা সংশোধন করে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।ওই ধারায় আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ করলে এতদিন সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডের বিধান ছিল।সংশোধিত আইনের খসড়ায় ওই সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ২ বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সাজার পরিমাণ বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অনেকগুলো ফোরাম থেকে প্রস্তাব আসে যে সাজা পাঁচ বছর পর্যাপ্ত নয়। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। সবাই সাজা সাত বছর করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ আইনের সাজা বাড়ানো হল কি না- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় নির্বাচন উপলেক্ষে এটা (শাস্তি) বাড়ানো হয়নি, এটা নিয়মিত কাজ।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইন জারি করে দুই বছরের জন্য তা কার্যকর করা হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা ওই আইনের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
চাঁদাবাজি, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও সন্ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র কেনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য এ আইন।তবে যখন যারা বিরোধী দলে ছিল, তারা এ আইনকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে সরকারের বিরুদ্ধে।এ আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ নিষ্পত্তির বিধান আছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৬০ দিন সময় পাওয়া যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনের ৪ নম্বর ধারায় শাস্তির বিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ আইনের আওতায় কেউ অপরাধ করলে এখন সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদ- হবে। অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাউকে ভয়ভীতি দেখানো, বল প্রয়োগ করা, রাস্তা অবরোধ, জোর করে মালামাল ও সুযোগ সুবিধা আদায় করা, আকাশ, নৌ ও বিমান যান চলাচলে বাধা দেওয়া, যানবাহনে গতি কমানো, গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া। এ ধরনের অপরাধ ঘটালে অপরাধীকে এ আইনের আওতায় সাজা দেওয়া হবে।এ সময় আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আইনে পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা গতানুগতিক পরিবর্তন। এর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই।
এছাড়া বৈঠকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘কনভেনশন অন দ্য ফিজিক্যাল প্রোটেকশন অব নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল অ্যান্ড নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিস’ এর খসড়া ও এর অনুসমর্থনের প্রস্তাব, বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে সইয়ের জন্য এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গর্ভনমেন্ট অব দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অন কো-অপারেশন কনসার্নিং রিটার্ন অব স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল ফ্রম রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট টু দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন’ এর খসড়ায় এবং ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়।