দেশের বৃহত্তম আমের বাজার কানসাটে আমের ওজন ও আড়তদারদের কমিশন নিয়ে দ্বন্দ্ব হওয়ায় গত ৩দিন ধরে কানসাট আমবাজারে আম বেচা-কেনা বন্ধ রয়েছে। এতে করে কাঁচা-পাকা আম নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে আমচাষীরা। আড়তদার সমিতি ও ব্যাপারীরা বলেন, প্রশাসনের হুমকি-ধামকি নয়, আলোচনা মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানই একমাত্র পথ। তবে প্রশাসন বলছে, যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যা সমাধান করা হবে। আর গাছে থাকা কাঁচা-পাকা আম নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে আমচাষীরা। নাকি এবার আম নিয়ে উত্তপ্ত হতে চলেছে কানসাট?

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আমবাজারে কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে ৪৫/৪৬ কেজিতে মন। কিন্তু এবার প্রান্তিক আমচাষীরা ডিজিটাল মাপযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ৪০ কেজিতে মন বিক্রির দাবি তোলে জেলা প্রশাসনের কাছে। প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন নির্দেশনা দেয়, ৪০ কেজিতে মন এবং চাষীদের কাছ থেকে আড়তদাররা কোন কমিশন নিতে পারবে না। গত ২৫ মে থেকে সরকারিভাবে আম পাড়া ও বাজারজাত করণ শুরু হলে; কানসাট আম বাজারের আড়তদাররা ৪৬ কেজিতে মন এবং কমিশন কাটা শুরু করলে; আমচাষী ও আড়তদারদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব । ফলে গত ৩ দিন ধরে এখানকার বাজারে আম বেচা-কেনা বন্ধ রয়েছে। আর কাঁচা-পাকা আম নিয়ে চাষীরা পড়েছে উভয় সংকটে। অনেক আমচাষী বাজারে আম নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আবার কোন কোন চাষী বলছেন, ৪৫ কেজিতে মন দিলেও, কোন কমিশন তারা দেবেন না। তবে প্রশাসনের কাছে চাষীদের দাবি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান। কানসাট আম আড়তদার ঐক্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী এমদাদুল হক জানান, চিরাচরিতভাবেই কাঁচামাল হিসেবে ৪০ কেজির স্থলে ৪৬কেজি হিসেবে আম বেচা-কেনা হয়ে আসছে। এছাড়া ব্যাপারীদের টাকা এবং আমের নিরাপত্তা স্বরূপ মন প্রতি কমিশন পেয়ে থাকে আড়তদাররা। কিন্তু জেলা প্রশাসন তাদের সাথে কার্যকরী আলোচনা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত (৪০ কেজিতে মন এবং আড়তদারদের কমিশন নেয়া বন্ধ) কার্যকর করায় বাধ্য হয়েই আড়তদাররা আম কেনা বন্ধ রেখেছে। তবে উদ্ধুত পরিস্থিতি নিরসনে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার উদ্দ্যোগ নেয়ার দাবী আড়তদার ও ব্যাপারীদের।

ঢাকার আম ব্যাপারী রহমতুল্লাহ বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে কানসাট থেকে আম ক্রয় করে আসছি। কিন্ত গত ৩ দিন ধরে ওজন নিয়ে জিটলতা সৃষ্টি হওয়ায় আম কিনতে পারছি না। তবে, তার প্রতিনিধিরা রহনপুর ও ভোলাহাট থেকে ৪৭ ও ৪৮ কেজিতে মণে আম কিনে ঢাকা পাঠাচ্ছি। তিনি, কানসাটের মূল ব্যবসা আম সংকটের দ্রুত সমাধানের দাবী জানান।

আম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, গত বছর এসময় ১’শ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হলেও এবার অনেকে আম পাড়া বন্ধ রেখেছে। এমনকি ২/ ৩ ’শ আম ভর্তি ট্রাক ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গেলেও এবার অনেক ্রটাক বসে আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কানসাটে দেড় শতাধিক আমের আড়তের ঝাপ বন্ধ দেখতে পাওয়া গেছে। কানসাট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বেনাউল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসক তাকে আহ্বায়ক করে এ উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে দায়িত্ব দিয়েছেন। ইতিমধ্যে, বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলাপ করেছি। যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট নিরসন করা হবে। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, প্রান্তিক চাষীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি ৪০ কেজিতে মন এবং আড়তদারদের কমিশন নেয়া বন্ধে প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকরে অনড় রয়েছে। তবে, আড়তদার ও আমচাষীয়রা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে তা সমাধান করা হবেগত কয়েক বছর ধরে আমে ফরমালিন আতংক ও আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয়ার পর’ আবারো প্রশাসনের বেঁধে দেয়া আমের ওজন ও আড়তদারদের কমিশন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় পূঁজি হারানোর আশংকায় এ অঞ্চলের আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। নাকি এবার আম নিয়ে উত্তপ্ত হতে চলেছে কানসাট?