বারবার প্রকৃতির ধ্বংসলীলা এবং মানবসৃষ্ট বিপর্যয় আন্ধারমানিক মোহনা ঘেঁষা খাজুরার সংরক্ষিত নয়নাভিরাম বনাঞ্চলটির পরিধি খাটো হয়ে যাচ্ছে। এখন পড়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। সাগর মোহনায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনের এই স্পটটি পর্যটকের কাছে খুবই প্রিয়। পর্যটককে আকৃষ্ট করে সাগরের কোলঘেঁষা মনোরম ছইলা-কেওড়া-গেওয়া গাছের মিশ্রনে সমৃদ্ধ বনাঞ্চলটি। কুয়াকাটায় গেলে পর্যটক দর্শনার্থী ভোলেন না এই স্পটটিকে এক নজড় দেখতে।

তবে কাগুজের স্বীকৃত খাজুরার বনাঞ্চলটির নাম এখন ভ্যান চালক, ভাড়াটে যানবাহনের লোকজন লেবুর চর নাম করে ফেলেছে। মুলত জেলেদের মতামত, দীর্ঘ সাগরে ইলিশসহ মাছ শিকার শেষে আন্ধারমানিক নদীর এই মোহনা দিয়ে শিববাড়িয়া নদীতে প্রবেশ করেন জেলেরা। ফেরেন মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরে। আরও অন্তত ৫০ বছর আগের কথা। তখন বনে-জঙ্গলে ঘেরা এই জনপদ। জেলেরা এক ধরনের ল্যাম্প ব্যবহার করত। বড় টিনের কৌটার ওপরের দিকটা গ্লাস দিয়ে আবৃত করে (বাতাসের ঝাপটা ঠেকাতে) এক ধরনের বাতি এই চরে জ¦ালিয়ে রাখত। ওই বাতিকে জেলেরা লেম্ফু বলে। রাতের বেলা ওই বাতি অনুসরন করে সাগর থেকে ফিরত। চিনত চরটি। তখন চরটিকে লেম্ফুর চর নামকরন হয়। এরপরে সীগন্যাল বাতি স্থাপিত হয়। আর এখন তো ট্রলারে সোলার প্যানেল। নামটি এখন বদলে গেছে। কিন্তু কাগজপত্রে বনাঞ্চলটির নাম রয়ে গেছে খাজুরার বনাঞ্চল। ২০০৫ সালে বনবিভাগের দেয়া তথানুসারে কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর রেঞ্জের অধীন খাজুরা ক্যাম্পের আয়তন ছিল ১৯০৪ দশমিক ৬৯ একর। যার মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল ৩৪৬ দশমিক ৮৭ একর। পরবর্তিতে খাজুরার বনে আরও এক হাজার বনায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু বনায়ন হয়নি। এমনকি সর্বশেষ ২০১০ সালে কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর ও খাজুরা ক্যাম্প এলাকার ৩৯৮৪ দশমিক ১১ একর (১৬১৩ হেক্টর) বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যানের আওতায় সংরক্ষিত করা হয়। কিন্তু এসব উদ্যোগ শুধু কাগজে-কলমেই চলতে চলতে থেমে যায়। ইতোমধ্যে কুয়াকাটার ইকোপার্ক সাগরের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধেকটা।

আর খাজুরার মনোরম বনাঞ্চলটি একদিকে সাগর মোহনা গিলে খাচ্ছে। অপরদিকে ঢেউয়ের আঘাতে বালুর আস্তরণে শ^াসমূল ঢেকে মরে যাচ্ছে ফি-বছর শত শত গাছ। এখন মরা গাছগুলো কঙ্কালের মতো দাড়িয়ে আছে। পর্যটকরা এসব গাছের মধ্য দিয়ে ঘুরে বেড়ান। তারপরও মনোরম এ বনাঞ্চলটি রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এক শ্রেণির বনদস্যু আবার গাছ না মরতেই কেটে নিয়ে বিক্রি করছে। এই বাগান ঘেঁষা অন্তত অর্ধশত দোকান বসেছে। যারা মাছসহ কাঁকড়া ফ্রাই করে বিক্রিসহ হোটেল-রেস্তরার ব্যবসা করছেন। তারা আবার মরা গাছগুলো কেটে জ¦ালানির যোগান দিচ্ছেন। খাজুরার বনটি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। নতুন বনায়নের পাশাপাশি সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটা ঠেকাতে সিসি ব্লক ফেলা প্রয়োজন বলে জেলেরা দাবি করেছেন। মহিপুর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হারুন-অর-রশীদ জানান, খাজুরা বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যানের আওতায় নেয়ার খবর তার জানা নেই। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে এটি রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও এবিএম সাদিকুর রহমান জানান, নয়নাভিরাম সংরক্ষিত সকল বনাঞ্চল রক্ষায় বনবিভাগকে নির্দেশনা দেয়া আছে।