সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে রাতভর বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের নিচু এলাকায় ফের পানি জমে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী।এর আগে মে মাসের শেষের দিকে মোরার প্রভাবে বৃষ্টিপাতসহ চলতি বর্ষায় বেশ কয়েকবার জলাবদ্ধতার ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা।বার বার জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন পানি জমে যাওয়া এলাকার লোকজন।তারা বলছেন, বৃষ্টিতে বার বার জলাবদ্ধতা হলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না।সাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার বিকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। চট্টগ্রামে নগরীতেও রাত থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা সোমবার ভোরের দিকেই তলিয়ে যায়। সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ইতোমধ্যে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামসহ আশেপাশের এলাকার এ বৃষ্টিপাত জানিয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের পাশাপাশি বৃষ্টিপাতও অব্যাহত থাকবে। সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, চান্দগাঁও, জিইসি মোড়, বাকলিয়া চকবাজার, বাদুরতলা, হালিশহর, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু পানি জমে যায়।জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেইট এলাকার পানি সকালে পানি অনেকটা নামলেও আগ্রাবাদ, বাদুরতলা, চকবাজারসহ নিচু এলাকায় পানি থেকে যায়। পানিতে বিভিন্ন সড়ক, গলিসহ পাড়া মহল্লার বিভিন্ন ভবনের নিচতলার বাসা ডুবে যায়।এতে করে চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়ে। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যায়। কোথাও কোথাও সড়কে জমে থাকা পানিতে বাস-অটোরিকশাসহ যানবাহন আটকে গিয়ে ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করে।আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলেন, বৃষ্টির পানিতে নিচতলা ডুবে গেছে। কয়েকদিন আগেও বৃষ্টিতে পানিবন্দি ছিলাম। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।একই এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিম এন্টারপ্রাইজের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. কিরন জানান, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। দোকান খোলা যাচ্ছে না।আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে পানিতে আটকে বাসের টালক মো. রাজু বলেন, গাড়ি বন্ধ হয়ে আছে সকাল থেকে…, চালানো যাচ্ছে না।পানি জমে ভোগান্তিতে পড়া আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের এলাকায় মহেশ খালের ওপর স্লুইস গেইট নির্মাণ করায় অতি বৃষ্টিতে পানি জমলে তা সরে না।স্থানীয় আসহাব উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি ওঠা এবং কয়েকদিন ধরে জমে থাকা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে আপনারা লিখে, টেলিভিশনে লিখে কী করবেন? যাদের কাজ তারা তো কিছুই করছে না।

দুই বছর আগে জলাবদ্ধতামুক্ত স্বপ্নের নগরগড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন; নগরবাসীর দুর্ভোগ দেখতে গিয়ে তিনি নেমেছেন হাঁটুপানিতে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগ্রাবাদ এক্সেক সড়কের ব্যাপারি পাড়া অংশ পরিদর্শনে গিয়ে জমে থাকা পানিতে নামেন সিটি মেয়র নাছির।এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও নাজমুল হক ডিউক।মেয়র সেখানে পরিদর্শনে যাওয়ার আগে থেকে জলাবদ্ধতার শিকার স্থানীয়রা মহেশখালের বাঁধ, সড়কের দুই পাশে নালা না থাকা এবং খাল-নালা পরিস্কার না করাই জলাবদ্ধতার কারণ বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।ব্যাপারি পাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, এত বার টেলিভিশনে দেখিয়ে, পত্রিকায় লিখেও কোনো কাজ হয়নি। কেউ এসবে নজর দেয় না।স্থানীয় কাঁচা বাজারে পানি উঠে যাওয়ায় বেচাকেনা ছিল বন্ধ।ওই বাজারের এক বিক্রেতা মেয়র আসবে জানতে পেরে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, মেয়রকে আসতে বলেন; দেখে যাক নগরীর কী অবস্থা।জলাবদ্ধ সড়কের ওপর দিয়ে চলাচলকারী নৌকা দেখে পানি ডিঙিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের কেউ কেউ নানারকম কৌতুকও করছিল।পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র নাছির জলাবদ্ধ আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ধরে কিছুটা হেঁটে এলাকার পরিস্থিতি দেখেন।তখন সাংবাদিকদের মেয়র নাছির বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। অনেক পুরনো সমস্যা। বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। এক বছরের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব, তা নয়। সিটি করপোরেশনের সরঞ্জাম স্বল্পতা আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কোনো আলাদা আর্থিক বরাদ্দ আমরা পাই না।এবারের নিম্নচাপের প্রভাবে ছাড়াও চলতি মৌসুমেই ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে বৃষ্টিপাতসহ বেশ কয়েকবার তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা। এ জলাবদ্ধতার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি এবং মেয়র সবাই মহেশখালের অস্থায়ী স্লুইস গেটকে দায়ী করছেন।মহেশখালের বন্দর রিপাবলিক ক্লাব সংলগ্ন অংশে ২০১৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদদের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাঁধটি নির্মাণ করে। মোরার প্রভাবে ৩০ মে রাতে ভারি বর্ষণের পর ৩১ মে ডুবে যায় নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, গোসাইলডাঙ্গা, আগ্রবাদ এক্সেস সড়ক, পোর্ট কানেকটিং সড়ক, হাজি পাড়া, বেপারিপাড়া, শান্তিবাগ এবং হালিশহর আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়ক।