আবহাওয়ার এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নি¤œচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সকাল ৬টায় ভোলা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল।এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হতে পারে।চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নি¤œচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দর সমূহের উপর দিয়ে দমকা/ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

নি¤œচাপটির প্রভাবে উপকুলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদেও অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে।এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো জানানো হয়েছে, এই নি¤œচাপের প্রভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।গভীর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী নি¤œচাপের কারনে সাগর উত্তাল রয়েছে। পটুয়াখালীর গোটা উপকুল জুড়ে শুরু হয়েছে ভারী ও হালকা বর্ষন। পাশা-পাশি দেখা দিয়েছে দমকা ও ঝড়োহাওয়া। উপকুলসহ পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর সর্তক সংকেত জারী করেছে আবহাওয়া অফিস। ফলে সকল ছোট-ছোট নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। ভারী বর্ষন আর ঝড়োহাওয়ার কারনে কর্মজীবি মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা স্থবীর হয়ে পরেছে। জেলার অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানান, গভীর বঙ্গেপসাগরে মৌসুমী নি¤œচাপের কারনে পটুয়াখালীতে ভারী ও হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। শনিবার রাত ৯টা থেকে রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪৬.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। মৌসুমী নি¤œচাপের কারনে সাগর উত্তাল রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ উপকুলে তিন নম্বর সর্তক সংকেত দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ছোট আকারের সকল নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে যে কোন সময় আবহায়া পরিবর্তন ঘটতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সংকেত বলবৎ থাকবে। এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার বর্তমানের কৃষকদের জন্য বৃষ্টিপাত আবশ্যক হলেও গতকাল শনিবার রাত থেকে ভারী বর্ষনের কারনে নদী বেষ্টিত এ উপজেলার মানুষের মধ্য ঘূর্নীঝড়ের আতংক দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বেরীবাধের বাইরে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে হাজারো পরিবার। যারা বর্তমানে আতংকগ্রস্থ্য। তবে বেশ কিছু মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, বর্তমানে উপকুলে ঝড়োহাওয়া ও বাতাস বইছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ সাগরে তিন নম্বর সর্তক সংকেত দেখানো হয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে সকল ট্রলার মালিক ও জেলেদের মোবাইলের পাশাপাশি মাইকিং করে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা তাদের ট্রলার নিরাপদে নিয়ে আসেন। সকাল থেকে এপর্যন্ত অনেক ট্রলার কিনারে পৌছে গেছে। এদিকে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে সোমবারও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এর ফলে সোমবার ভোর থেকে মোংলা বন্দরসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে দমকা ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত বয়ে যাচ্ছে। নিম্মচাপের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করলেও বন্দরে অবস্থানরত গ্যাস, ক্লিংকার (সিমেন্টের কাচামাল) ও জিপসামবাহী (সিমেন্টের কাচামাল) জাহাজের পণ্য খালাস কাজ চলছে। এছাড়া বন্দর জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ডে পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দরের হারবার বিভাগ। তবে সাগর উত্তাল থাকায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে-মাঝিমাল্লাদেরকে উপকূলের কাছাকাছি নদী-খালে নিরাপদে থাকার জন্য বলেছে আবহাওয়া অফিস। নিম্মচাপের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১/২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকার কথাও জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।