ঢাকার কেরানীগঞ্জের পশ্চিম মুগারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহকে অপহরণ করে হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুজনকে আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন।বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।এ মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি হলেন খোরশেদ আলম। তাঁকে মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। এ ছাড়া আসামি মেহেদী হাসান ওরফে শামীমকে ১০ বছর এবং মিতু আকতারকে এক বছরের কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকার জরিমানা করা হয়েছে। এ দুজন সম্পর্কে ভাইবোন। জরিমানা অনাদায়ে দুজনকে আরও এক মাস কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। অপর আসামি এই দুজনের মা নাছিমা বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত।সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার মুগারচর গ্রামের স্কুলছাত্র মো. আবদুল্লাহ গত বছরের ২৯ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়। একপর্যায়ে মুঠোফোনে তাকে অপহরণের দাবি করে দুই দফায় দুই লাখ টাকা নেয় অপহরণকারীরা। এরপরও শিশুটিকে ফেরত দেয়নি তারা। এরপর ২ ফেব্র“য়ারি দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা আবদুল্লাহদের বাড়ির মাত্র ১০০ গজ পশ্চিমের এক বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। ওই বাড়িটি আবদুল্লাহদের মায়ের বড় মামা মোতাহার হোসেনের। ওই দোতলা বাড়ির একটি কক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরা আবদুল্লাহদের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।এ ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি আবদুল্লাহদের নানা মারফত আলী বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় এ মামলা করেন। ওই বছরের ৯ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্র আসামিরা হলেন খোরশেদ আলম, মেহেদি হাসান, মিতু আক্তার, কায়কোবাদ, নাসিমা বেগম ও জহিরুল ইসলাম। পরে আসামি জহিরুল ইসলাম ও কায়কোবাদকে মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ ছাড়া মোতাহার হোসেন, সুজন দাশ, শফিকুল ইসলাম ও হেদায়েতুল ইসলামের ঠিকানা না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয় পুলিশ। ওই বছরের ৭ ফেব্র“য়ারি এ হত্যা মামলার সন্দেহভাজন মূল আসামি মোতাহার হোসেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

রায়ে বলা হয়, অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা নেওয়ার পর শিশু আবদুল্লাহকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। আসামিরা হত্যা করেই থেমে থাকেনি। নিহত শিশু আবদুল্লাহর লাশ প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে মোতাহার হোসেনের বাড়ির একটি কক্ষে রাখেন। মুঠোফোনের সূত্র ধরে আসামিদের গ্রেপ্তার ও শিশু আবদুল্লার গলিত লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ধরনের নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকা-ে অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ২০ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছেন। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে শিশু আবদুল্লাহকে হত্যার দায়ে খোরশেদ আলমকে মৃত্যুদন্ড এবং অন্য দুই আসামিকে হত্যায় সহযোগিতা করার অপরাধে বয়স বিবেচনায় সাজা দেওয়া হলো।