রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনায় নিখোঁজ সেনাসদস্যসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৮-এ। স্বজনদের আশঙ্কা, এখনো বিভিন্ন স্থানে মাটি চাপা পড়ে থাকতে পারেন অনেকে। অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধস, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে ও গাছপালা ভেঙে পড়ে পাঁচ জেলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১৫৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল রাঙামাটিতেই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ কেড়ে নিয়েছে ১০৮ জনের প্রাণ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৩৬ জন, বান্দরবানে ছয়জন, খাগড়াছড়িতে দুজন ও কক্সবাজারে দুজনের প্রাণহানি হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি থেকে সেনাবাহিনীর সৈনিক মো. আজিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করা হয়। সার্কিট হাউসের লেকের পাড়ে মাটির নিচ থেকে এক নারী ও শিমুলতলী থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। জেলা প্রশাসনে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে শহরের ভেদভেদী ও মানিকছড়ি এলাকার অন্তত পাঁচটি জায়গায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা।

পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিকল্প সড়কও। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের লালখান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ মতিঝর্ণা পাহাড়ি এলাকা পরিদর্শনকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পরে হালিশহরের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি। এ ছাড়া বান্দরবানে পাহাড় ধস ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর।

বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হয় সারা দেশে। সোমবার এটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে গ্রাম-শহরে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়। অনেক স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।

সোমবার থেকে পাহাড়ি এলাকাগুলোয় একের পর এক পাহাড় ধসে পড়তে থাকে। মঙ্গলবার সকাল থেকে হতাহতের খবর মিলতে থাকে। বাড়তে থাকে লাশের সংখ্যা। এর মধ্যে ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম–রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থলসংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরো একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় ভূমিধসে পড়া সেনাসদস্য সৈনিক মো. আজিজুর রহমান নিখোঁজ থাকেন। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আজ সকালে আজিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করেন সেনাসদস্যরা।