নাটোরের সিংড়ায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা গণপিটুনী দিলো স্থানীয় আ’লীগের নেতা-কর্মী সহ প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামবাসীকে। এ ঘটনায় সিংড়া হাসপাতালে ২০জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের জোলার বাতা এলাকায় এলাকাবাসীর ৫টি নসিমন গতিরোধ করে এই গণপিটুনী দেয়া হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।এদিকে ঘটনার পর ওই যুবলীগ কর্মীদের আড্ডার স্থান সিংড়া কোর্ট মাঠের একটি ক্লাব ঘরে তলাসী চালিয়েছে সিংড়া থানা পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ২রা রমজান উপজেলার আনোলিয়া গ্রামের মাহাবুর রহমান নামের এক ব্যাক্তির সাথে একই গ্রামের অপর একজনের বিরোধে মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে মাহাবুর রহমান সিংড়া থেকে পৌর যুবলীগ কর্মী স¤্রাট হোসেনের নেতৃত্বে ৫ থেকে ৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই গ্রামে যায়।এসময় গ্রামবাসীরা ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মারপিট করে।এরপর থেকেই আনোলিয়া গ্রামবাসীদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হুমকির কারণে আনোলিয়া গ্রামবাসীরা এক রকম উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করে আসছিল। শনিবার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক উপস্থিত হলে আনোলিয়া গ্রামবাসী প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে প্রতিমন্ত্রী রোববার তাদেরকে মিমাংসা করে দেয়ার জন্য উপজেলা সদরে আসতে বলে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সে অনুযায়ী আনোলিয়া গ্রামবাসী ৫ থেকে ৬টি নমিসন নিয়ে উপজেলা সদরে আসছিল। এসময় খবর পেয়ে জোলার বাতা এলাকায় যুবলীগ কর্মী স¤্রাট ও কাওছার হোসেনের নেতৃত্বে ১৫-২০জনের বাহিনী নসিমন গতিরোধ করে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠি দিয়ে গ্রামবাসীকে গণপিটুনী দেয়। এসময় মহাব্বত হোসেন (৩৫) নামের এক কৃষককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দুই পা ও বাম হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়। আহত হন সিদ্দিক (৩৮), আব্দুল মতিন (২৭), আলমগীর (২০), জহুরুল (৩৫), আফসার (৪৫), নাজমুল (৩২), মিন্টু (২৬), জামাল (২০), আব্দুল জলিল (৩৪), মুকুল (১৬), উজ্জল (৩০), আলম (২৮) ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীসহ কমপক্ষে ২০জন আনোলিয়া গ্রামবাসী আহত হয়। এদিকে ঘটনার পর পরই উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা, যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ ইউনিয়ন আ’লীগের নেতৃবৃন্দ গ্রামবাসীকে দেখতে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনস্থানীয় আ’লীগ কর্মী ও আনোলিয়া গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী সরকার ও সিদ্দিক আলী বলেন, স্থানীয় মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ডাকে সাড়া দিয়ে সিংড়া আসার পথে আজ গণপিটুনী খেতে হলো গ্রামবাসীকে। এই ব্যাথা ভুলবো কিভাবে? ইউনুছ আলী সরকার আরও বলেন, গত ১৭জুন শনিবার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান কামরান তাকে মোবাইল ফোনে সিংড়া আসতে নিষেধ করেছিলেন। পরিকল্পিত ভাবে গ্রামবাসীর উপর হামলা করা হয়েছে। সিংড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জামান উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় এপর্যন্ত ২০জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে একজনের অবস্থা আশংকাজনক। এবিষয়ে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এর মোবাইল নম্বরে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ওসি তদন্ত নুর-ই-আলম জানান, তিনি শুনেছেন এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর হামলা করেছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন মামলা বা কেউ আটক হয়নি।