দেশে প্রথমবারের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গীর তথ্য-উপাত্তসহ প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার চিহ্নিত অপরাধীর সর্ববৃহৎ ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অপরাধীদের ছবি, আঙ্গুলের বায়োমেট্রিক ছাপ, চোখের মণির স্ক্যান, পূর্ববর্তী অপরাধের রেকর্ড এবং ফৌজদারি অপরাধে শাস্তির তথ্যেও মতো অপরাধীদের ১ শ’ ৫০ ধরণের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে এই ডাটাবেজে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘ডাটাবেজে খুব সহজেই অপরাধীদের বিবরণ পাওয়া যায়, যা আমাদের অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ করে জঙ্গি তৎপরতা দমনে সহায়তা করে।’  র‌্যাব গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গী এবং ফৌজদারি কার্য বিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের তথ্য নিয়ে ২০১১ সালে এই ডাটাবেজ তৈরীর কাজ শুরু করে।
ডাটাবেজ তৈরী করার লক্ষ্যে, অপরাধীদের মৌলিক তথ্য সংগ্রহ করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত র‌্যাব কর্মকর্তারা সারাদেশের ৬৭টি জেলখানার মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের ৩টি ছাড়া বাকি ৬৪টি জেলখানা পরিদর্শন করেন। অপরাধীদের তালিকা তৈরী করার কাজে সহযোগীতার জন্য, তারা কিছু জেল কর্মকর্তাকেও প্রশিক্ষণ দেন।

বর্তমানে র‌্যাবের হাতে কোনো অপরাধী বা জঙ্গী গ্রেপ্তার হলে, এক মিনিটের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য ডাটাবেজের মূল সার্ভারে যোগ করতে সক্ষম হচ্ছেন। অপরাধীদের প্রত্যেকের জন্য একটি করে কোড নম্বর দেয়া আছে। এই কোড নম্বর চাপার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অপরাধীর সকল তথ্য বেড়িয়ে আসে। বাহিনীটির সকল ব্যাটালিয়ন ও অপরাধ প্রতিরোধকারী টিমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে র‌্যাবের সদর দপ্তরে ডাটাবেজের মূল সার্ভারে তথ্য আপলোড করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয়ে যারা অপরাধ সংঘটিত করে, ডাটাবেজটি তাদেরকেও সনাক্ত করতে সক্ষম।
ডাটাবেজের তথ্যের সাথে ব্যক্তির তথ্য মিলিয়ে র‌্যাব ১১০০ জন ব্যক্তিকে সনাক্ত করেছে, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে অপরাধ সংঘটিত করেছে।

কোনো ব্যক্তি অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত কিনা, তা যাছাই করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ডাটাবেজে র‌্যাবের প্রবেশাধিকার রয়েছে। এ লক্ষ্যে, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি’র (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাটাবেজে প্রবেশাদিকার পেতেও কাজ চলছে। ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী, যারা এক দিনের জন্যও কারাগারে ছিলো, এমন ৫৮ হাজার বন্দীর ২ শত ধরণের তথ্য সম্বলিত একটি কারাবন্দী ডাটাবেজ চালু করেছে র‌্যাব। ডাটাবেজে অপরাধীদের উভয় হাতের দশ আঙ্গুলের বায়োমেট্রিক চাপ ও চোখের মণির স্কেন সংরক্ষিত রয়েছে।  ডাটাবেজে অপরাধীদের পূর্বের অপরাধের রেকর্ড, অপরাধের ধরণ, শাস্তির বিবরণ, তাদের নাম, ঠিকানা এবং পেশা উল্লেখ রয়েছে।

কারাকর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় অপরাধ বিরোধী বাহিনী, র‌্যাবের কমিউনিকেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখা এই ডাটাবেজটি তৈরী করেছে।  সারা দেশের ৬৭টি কারাগারকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের আওতায় এনে, র‌্যাবের সদর দপ্তরে একটি প্রধান ডাটাবেজ ও একটি পুনোরুদ্ধারকারী (রিকভারি) সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে। এই ডাটাবেজটিও জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সংগ্রহ করতে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় পত্র শাখা’র ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার পেয়েছে এবং মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এর ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার পাওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  এই ডাটাবেজটি এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যে, ডাটাবেজের অধীন যে কোনো কারাগারের বন্দীর তথ্য মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে র‌্যাবের মহাপরিচালক ও জেলের মহাপরিদর্শকের কাছে চলে যাবে। এই ডাটাবেজের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এক ক্লিকেই অপরাধীদের অবস্থা ও ৬৭টি কারাগারের বন্দীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।  ডাটাবেজ সিস্টেমটিকে যথাযথভাবে পরিচালনা করতে, বর্তমানে র‌্যাব কারা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।