ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরবরাহ করার কাজে স্থানীয় যুবলীগ বাধাদানের সেই ঘটনার পর এখন পদ্মা নদী থেকে সব ধরনের বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। ঈশ্বরদীর পাকশি পদ্মা নদীর বালু ব্যবসা এখনো বন্ধ হয়নি, বরং পূর্বের মতোই পুরোদমে চলছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও পাকশি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল হক বিশ্বাস’র একচ্ছত্র আধিপত্যে খোদ পদ্মা নদীতে বালুর বিশাল মজুদ করে প্রতিদিন তা বিক্রি করা হচ্ছে। ক্ষমতার দাপটে তিনি এই বালু বানিজ্য করছেন কোন রাখ-ঢাক ও বাধা ছাড়াই।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীর স্বাভাবিক গতিরোধ ও বাঁধ দিয়ে রিতিমত পাহাড়সম বালুর মজুদ করে বালু বানিজ্যে মেতে উঠেছেন প্রভাবশালি বালু ব্যবসায়িরা। বালু উত্তোলনকারি ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষমতাসিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি ও দলিয় সূত্র। সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর এই বিশাল এলাকা লিজ না নিয়ে লিজ গ্রহিতা কৃষকদের নিকট থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে বালুর ব্যবসা পরিচালনা করছেন বালু ব্যবসায়ি আওয়ামীলীগের ‘নির্দিষ্ট’ কয়েকজন নেতারা। রেল সূত্র এবং স্থানীয়রা বলেছেন কোন লিজ নেই, দলিয় প্রভাবে জবর দখল করেই বালুর ব্যবসা পরিচালনা করছেন পাকশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস। পাকশি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতা জানান, পাকশি ইউপি নির্বাচনের আগে বালু ব্যবসা পরিচালনার জন্য কয়েকজন দলিয় নেতাদের সমন্বয় ছিল, কিন্তু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একাই তার বাহিনী দিয়ে সব বালুমহাল ও বালুর ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছেন। আগে বালু বিক্রির টাকার ভাগ পেলেও এর কোন ভাগও এখন দলিয় কেউ পাননা বলে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতারা। এ ঘাটে হান্নান, রেজা, শাহিন, মাসুমসহ ৭ জন ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে জানিয়েছেন পাকশি ইউপি চেয়ারম্যান এনাম বিশ্বাস।

স্থানীয়রা জানান, শতবর্ষি ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহি ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর খুব কাছ থেকে বালু উত্তোলন এই ব্রিজ দুটির জন্য হুমকি ও প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া স্বত্বেও বালু উত্তোলন থেমে নেই। বালুর স্তুপ বড় হতে হতে এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে বালুর বিশাল বিশাল স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। তবে বালুমহালের নেতৃত্বদানকারি প্রধান ও একমাত্র ব্যাক্তি হিসেবে পাকশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাকশি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বিশ্বাস বলেছেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিকট বালু স্তুপ করা হলেও এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছেনা, এ বালু কুষ্টিয়া, তালবাড়িয়া, আলাইপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে নৌকা যোগে এনে নৌকার সাথে ড্রেজিং মেশিন লাগিয়ে বালুর মজুদ করার পর এখান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে বালু। পাকশি পদ্মার এ বালুমহালে থাকা একাধিক বালু ব্যবসায়িরা জানান, তারা পদ্মা নদীর এসব জমি ভাড়া নিয়ে বালু স্তুপ করে বিক্রি করছেন। বালু ব্যাবসায়িরা জানান, প্রতিদিন ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর ৪টি ঘাটে গড়ে প্রায় ১ হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার বালু এসব ঘাট থেকে বিক্রি হয়। পাকশি ইউপি চেয়ারম্যান এই পরিমান ৫ থেকে ৬’শ ট্রাক বলে দাবি করেছেন। জানা যায়, ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন এসব ঘাট ও বালু মহাল থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। সরেজমিনে পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার বালুমহালে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে ঘাটে ট্রাক-ট্রাক্টর আসছে, বালু বোঝাই করে চাঁদার টাকা নির্দিষ্ট ব্যাক্তির হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছে বালু। বালুঘাটের একজন ম্যানেজার তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখানে ৬ জন পার্টনার ৬টি বালুর স্তুপ করে ম্যানেজার নিয়োগ করে বালু বিক্রি করছেন।বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশি বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্দিষ্ট দুরত্বের কাছাকাছি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে এই ঐতিহাসিক ব্রিজ হুমকির মুখে পড়বে। আর ব্রিজের এত কাছাকাছি এলাকায় বালুমহাল ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসব বিষয়ে পাকশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক এনাম বিশ্বাস বলেন, কুষ্টিয়ার মাসুম নামের একজনের নামে এই বালু মহাল লিজ নেওয়া আছে, পাকশি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম রঞ্জুর নামে তিনি অথরাইজড করেছেন। আর অন্যান্য স্থানে কৃষকদের লিজ নেওয়া জমি ভাড়া নিয়ে তারা বালু বিক্রি করেন।