ভাতিজা মোহাম্মেদ বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজের ছেলে মোহাম্মেদ বিন সালমানকে সৌদি আরবের নতুন ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেছেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ।রাজতন্ত্রের দেশ সৌদি আরবে যুবরাজই বাদশাহর উত্তরসূরি। বুধবার এক ফরমানের মাধ্যমে বাদশাহ ওই পদে পরিবর্তন আনেন বলে সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) খবর। এসপিএ জানিয়েছে, সৌদি আরবের উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির ভোটাভুটিতে ৪৩টি ভোটের মধ্যে ৩১টি পান মোহাম্মেদ বিন সালমান। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মক্কার আল সাফা প্রাসাদে উত্তরাধিকার নির্ধারণ কমিটির ওই বৈঠক হয়।

৩২ বছর বয়সী মোহাম্মেদ বিন সালমান এতোদিন সৌদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন্স প্রিন্স ছিলেন। ক্রাউন প্রিন্স হওয়ায় এখন থেকে তিনিই উপ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও তার হাতে রয়েছে।ইয়েমেনে সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মেদ বিন সালমান সৌদি রয়েল কোর্টেরও প্রধান।তিনি বাদশাহ সালমানের তৃতীয় স্ত্রী ফাহদা বিনতে ফালাহ বিন সুলতানের ছেলে। কিং সউদ ইউনিভার্সিটির আইনের ডিগ্রি রয়েছে তার। পদচ্যুত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন নায়েফ উপ প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও হারিয়েছেন।দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা নায়েফকে সব দায়িত্ব থেকেই অব্যাহতি দিয়েছেন বাদশাহ। সৌদি বাদশাহর ডিক্রিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রিন্স আবদুলআজিজ বিন সউদ বিন নাইফকে।সাবেক যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন নায়েফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদও হারিয়েছেন২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের মসনদে বসেন সালমান। ক্ষমতায় বসেই প্রয়াত বাদশাহর আমলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেন তিনি।ওই বছর এপ্রিলে সৎ ভাই মুকরিন বিন আব্দুল আজিজকে সরিয়ে দিয়ে বাদশাহ সালমান তার ভাতিজা মোহাম্মেদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন। আর নিজের ছেলে মোহাম্মেদ বিন সালমানকে বানান ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স।রয়াটার্স লিখেছে, ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে মোহাম্মেদ বিন সালমানের এবারের পদোন্নতি প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু কাতার ও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা আর ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধের এই সময়ে বাদশাহর নতুন রদবদল বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে অনেকের মধ্যে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানিকারক এই দেশের রাজনীতিতে মোহাম্মেদ বিন সালমানের অতি দ্রুত উত্থান যতটা চমক সৃষ্টি করেছে, তার চেয়েও তার তুতো ভাইদের একে একে ক্ষমতা হারানোর বিষয়টি অনেক বেশি বিস্ময়কর বলে বর্ণনা করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হলেও মোহাম্মেদ বিন সালমান সৌদি আরবের তেল নীতি বাস্তবায়ন ও ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিলেন। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক এই দেশের বিপুল প্রতিরক্ষা বাজেটও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।তাকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করার পর সৌদি বাদশাহ নতুন যুবরাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এর পরপরই পদ হারানো প্রিন্স নায়েফ নতুন যুবরাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন বলে সৌদি সংবাদ মাধ্যমের খবর।