অনগ্রসর জনপদের লাইলি বেগম এবার মেক্সিকোর কানকুনে জাতিসংঘের সম্মেলনে দূর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক কৌশলগত পরামর্শ, সমন্বয়, নারীদের দূর্যোগ মোকাবেলায় অংশগ্রহণসহ নানাদিক নিয়ে লাইলি সেখানে বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামে বাড়ি লাইলির। দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস বিষয়ক বৈশি^ক সম্মেলন বা গ্লোবাল প্লাটফর্ম ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন বিষয়ক বিশ^ব্যাপী এ সম্মেলনে লাইলি দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নারীরা সরকারের এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কীভাবে যৌথভাবে কাজ করেন তা বলেছেন। সেখানে তিনি নারী নেতৃত্বের অগ্রসর ভুমিকার কথা বলেছেন। বলেছেন দুর্যোকালীন জীবন-যুদ্ধের কথা। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নারীরা সারাবিশে^র রোলমডেল হতে পারে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

২২ থেকে ২৬ মে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে বুধবার দুপুরে লাইলি বেগম কলাপাড়া প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস ও একশন এইড বাংলাদেশ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা আফরোজ কাজল। সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি মেজবাহউদ্দিন মাননু। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ। লাইলি বলেন, তার জীবনটা গল্পের মতো। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে। থেমে যাননি। বিয়ের পরেও পড়াশোনা করেছেন। এসএসসি সম্পন্ন করেছেন। সিডর-মহাসেন এর মতো দুর্যোগে যেমন নিজে মোকাবেলা করেছেন। তেমনি দলবদ্ধ হয়ে নারীদের নিয়ে দুর্যোগ বিষয়ক সচেতনতার কাজ করেছেন। অসংখ্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এ সংক্রান্ত। অবলা থাকেননি। এখন ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্ব দেন। সভাপতি তিনি। দুর্যোগে প্রথম পতাকা তুলে হুশিযারি সঙ্কেত দেন। দ্বিতীয় পতাকায় তুলে প্রচার চালান। আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলেন। প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী মায়েরা কে কীভাবে কোন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন ওই পিরামর্শ দেন। শুধু সমাজ সচেতন করছেন না। সংসার জীবনে তিন সন্তানকে পড়াচ্ছেন বড় মেয়ে অনার্স করছেন। এক ছেলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংএ পড়ছেন। ছোট ছেলে কলেজ পড়–য়া। সফলতার ছোয়া সংসারেও। বাধা হয়ে থাকেননি স্বামী। অজোপাড়া গায়ের ঘরকুনো লাইলি আজ জাতিসংঘের সম্মেলনে কথা বলে কলাপাড়ার দুর্যোগপ্রবণ উপকুলের আলোকবর্তিকা হয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। এ মানুষটি এখন দুর্যোগ মোকাবেলায় সবার সক্রিয় অংশগ্রহণে আরও কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি চান পুরুষ শাসিত সমাজে, ধর্মীয় অন্ধত্ত্বতা কাটিয়ে ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে নারী-পুরুষ সবাই দুর্যোগ মোকাবেলায় এগিয়ে আসুক। এগিয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্যোগ মোকাবেলার সফলগাঁথা নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্যে চেষ্টা করলেই যে সফলতা আসে তার এক জ¦লন্ত দৃষ্টান্ত কানকুন জয়ী লাইলি বেগম।