শুরুটা করেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ; বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনার জবাবে এখন সংসদে সরব হতে শুরু করেছেন অন্য সহকর্মীরাও। ঈদের আগে সংসদের শেষ দিনের অধিবেশনে বৃহস্পতিবার শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ৮৪ বছর বয়সী মুহিতকে নিয়ে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণের’ সমালোচনা করেন।

বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিল্পমন্ত্রী আমু বলেন, ভ্যাট নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। এই বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে মন্ত্রিসভায় পাস হয়। তখন কেউ কোনো আপত্তি করেননি। ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর প্রতি এখানে কটাক্ষ করে অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন। এটা অনভিপ্রেত।আর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন,“বাজেট নিয়ে অনেক কথা, আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। সংসদ সদস্য হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে একজন নাগরিক হিসেবে এগুলো পড়ছি ও শুনছি। ১৫ শতাংশ ভ্যাট, আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রে সুদ হার নিয়ে সব কথা হচ্ছে। সবাই অর্থমন্ত্রীর দিকে তীর ছুঁড়ছেন, তাকে দোষারোপ করছেন। মনে রাখতে হবে, অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশাল বাজেট উপস্থাপন করেছেন।গত ১ জুন বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের সমালোচনা সইতে হচ্ছে মুহিতকে।এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজনও সংসদে দাঁড়িয়ে বাজেটের সমালোচনা করেছেন, যদিও তাদের উপস্থিতিতেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস হওয়া বাজেট মুহিত উপস্থাপন করেছেন।জাতীয় পাটিৃর দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও কাজী ফিরোজ রশীদ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করতে গিয়ে তার বয়স নিয়েও কথা বলেন এবং পদত্যাগ দাবি করেন।কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকসহ সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন সাংসদও বাজেট আলোচনায় ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেনবুধবারের অধিবেশনে তোফায়েল আহমেদ অর্থমন্ত্রীর পক্ষে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ‘বক্রোক্তির’ জবাব দেন।তিনি বলেন, “একজন সম্মানিত মানুষকে সম্মান দিতে হয়। বাবলু (মুহিতকে) বলেছেন- ‘এখন বিদায় হন’। উনি আপনাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন। উনি ১২টা বাজেট দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আরও দেবেন। উনার ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আছে।”জাতীয় সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।বাবলু ও ফিরোজের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “বয়স নিয়ে কথা বলেন, আপনার নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বয়সের কথা বিবেচনা করেন নাৃ যিনি আপনাকে মহাসচিব বানান, তারপর আবার রুহুল আমিন হাওলাদারকে বানান, যার বয়স অর্থমন্ত্রীর চেয়েও ৫ বছর বেশি।এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বাজেট আলোচনায় শিল্পমন্ত্রী আমু বলেন, একটা বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাজেটের ভেতর ভালো-খারাপ থাকতে পারে। সেটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। সেই আলোচনা আমরা করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৩০ তারিখে একটা সিদ্ধন্ত আসবে। কিন্তু এজন্য অপেক্ষা না করে যারা সমালোচনার নামে কটাক্ষ-কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য করছেন এটা ঠিক নয়, দুঃখজনক।

বাজেটের বিভিন্ন ‘ইতিবাচক’ দিক তুলে ধরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির উদ্দেশে আমু বলেন, “এত কিছু দিক নিয়ে তারা কথা বলেনি। তারা শুধু কটূক্তি-সমালোচনা করেছে। স্বৈরশাসনের ফলে যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে তাদের চিন্তা-চেতনা সেরকমই থেকে যায়।শিল্পমন্ত্রীর আগে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “ভ্যাট আইন, আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এই তিনটি বিষয় নিয়েই বাজেট নয়। আরও বিষয় আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি না। ভ্যাট, সুদ হার ও আবগারি- এই তিন বিষয়ের এদিক হিসাব করে বাজেট মাপবেন না। এক মুখে অর্থনীতির প্রশংসা আর একদিকে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী বলবেন- এটা কিন্তু হয় না। আলোচনায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “অর্থমন্ত্রীর মত একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা গৌরব বোধ করি। তাকে নিয়ে যেভাবে কথা বলা হয়েছে তাতে জাতি বিব্রত হয়েছে। আমিও বিব্রত হয়েছি। তিনি সিনিয়র ম্যান। সংসদে এভাবে কথা বলা উচিত নয়। তাহলে জাতি আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে।