মধ্যপ্রাচ্য অধুষ্যিত হাটহাজারীতে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কোটি কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য। রমজান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে বলে ধারণা করছে বিজ্ঞ মহল। গত ১০-১২ দিনে হাটহাজারী পৌরসভা সহ উপজেলার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়ক এর বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে ৩/৪ হুন্ডি ব্যবসায়ীর অন্তত ৭-৮টি স্পটে ১০-১২ লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অবৈধ টাকা খোয়া যাওয়ার এসব ঘটনার প্রতিকার চাইতে থানা পুলিশকে অবহিত করেনি। পৌর এলাকার বাণিজ্য কেন্দ্র হাটহাজারী বাজার, কাচারী সড়ক, কলেজ গেইট, বাসস্টেশনসহ এলাকা ছাড়াও উপজেলার এক ডজনেরও বেশি স্পট রয়েছে যেখানে হুন্ডির টাকা লেনদেন চলে। পুলিশের তালিকায় বেশ কিছু হুন্ডি ব্যবসায়ীর নাম থাকলেও তারা রহস্যজনক কারণে থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত, দুবাই, ওমান, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহারাইন, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান। এদের মধ্যে অনেকে আবার অবৈধভাবে কর্মরত থাকায় তারা বৈধ কাগজপত্রের অভাবে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে পারেন না। ফলে তারা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাধ্য হয়ে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। ঈদে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ঘটনা আরও বেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদকে কেন্দ্র করে টাকার চাহিদার বেড়ে যাওয়ার কারণে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা যেমন অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে উঠে। উপজেলায় প্রায় ২৫-৩০৫ জন করে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এ সময় বেশ তৎপর রয়েছেন। কর্মচারীদের মাধ্যমে তারা বিদেশ থেকে পাঠানো হুন্ডির টাকা যথাস্থানে পাঠিয়ে থাকেন। হুন্ডির মাধ্যমে একটি ফোনেই দ্রুত নগদ টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং টাকা পাঠানোর খরচও অপেক্ষাকৃত কম হওয়ার কারণে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেনের দিকে ঝুঁকেন প্রবাসীরা। এছাড়া গত দুই বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীলা নতুন একটি মাধ্যম যুক্ত করেছে এ ব্যবসার সাথে তাহল বিকাশ। এ মাধ্যটিও ব্যবহার করে হুন্ডি ব্যবসায়ীরাও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন জনগণের কাছ থেকে। তাদের এ অবৈধ হুন্ডির লেনদেনের ফলে বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সরকার প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাটাহাজারী উপজেলায় কর্মরত এক রেমিটেন্স কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, ঈদ উপলক্ষে অন্য বছরগুলোতে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে যে হারে রেমিটেন্স প্রবাহ আসত সে হারে এবার আসছে না। বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। অথচ ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার কথা। অবৈধ পথে টাকা আসার কারণেই ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা কম আসছে বলে তিনি ধারণা করছেন। এই ব্যাপারে হাটাহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল উদ্দিন জাহাংঙগীর এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বছরই ঈদ উপলক্ষে এদের তৎপরতা বাড়ে। গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি টিম হুন্ডির টাকা লেনদেনের ওপর নাজর রাখছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের ধরতে মাঠে কাজ চলছে।