রাজধানী ঢাকার মিরপুরের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর তাঁতিরা শেষ মূহুর্তে ঈদের অর্ডারের শাড়ি-কাপড় তৈরিতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী বেনারসি-কাতান শাড়িতে এবারের বিশেষ আকর্ষণ “জাবেদ কাতান-বেনারসি”। আগে ঈশ্বরদীর তাঁতিরা তৈরি করতেন বেনারসি কাতান শাড়ি। এখন সেই শাড়িতে পুথি, পাথর, জড়ির মনকারা নকশা যোগ হওয়ায় এসব শাড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে দ্বিগুন। তাঁতিরা জানান, এবারের ঈদে তারা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ি পর্যাপ্ত শাড়ি-কাপড় তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ একটাই বেনারসি-কাতানের পাশাপাশি জর্জেট, টিস্যু ও টাঙ্গাইল সুতি শাড়িতে তাদের হাতে তৈরি কারচুপির আকর্ষণীয় নকশার কাজ রয়েছে। ঈশ্বরদী শহরের ফতেমোহাম্মপুরে অবস্থিত বেনারসি পল্ল¬¬ীর নিয়মিত তাঁতিদের পাশাপাশি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে চার শতাধিক নারি ও পুরুষ এসব শাড়িতে ডায়মন্ড পাথর চুমকি দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি। প্রতিদিনই এসব শাড়ি রাজধানী ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়িরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। শাড়ির মধ্যে স্থানিয় ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কারচুপির জাবেদ কাতান। এছাড়া কারচুপির আঁচল পাড়, ফুল বডি, মেচিং জর্জেট, জাবেদ ডায়মন্ড, টিস্যু ডায়মন্ড শাড়ি এবারের ঈদে নারীদের কাছে ভিষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ব্যবসায়ি সোহেল জানান, এসব শাড়ির এবার প্রচুর চাহিদা রয়েছে কিন্তু তারা পর্যাপ্ত শাড়ি তৈরি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ঈশ্বরদীর তৈরির কাতান, বেনারসি ও জর্জেট শাড়ি পাইকরি বিক্রি হচ্ছে সর্ব্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায়। এসব শাড়ি বিভিন্ন দোকানে খুচরা বিক্রি হচ্ছে আট থেকে দশ হাজার টাকায়। এছাড়া সুতি ও টিস্যুর উপর নকশার কাজ করা শাড়ি সর্ব্বোচ্চ পাইকরি মূল্য প্রতিটি আট’শ থেকে ১৫’শ টাকার মধ্যে রয়েছে। এগুলো খুচরা বাজারের বিভিন্ন শোরুমে ১৬’শ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তাঁতিরা জানান, উপযুক্ত পৃষ্টপোষকতা পেলে ঈশ্বরদীর তৈরি শাড়ি দেশের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে পারবেন।

ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর শ্রমিকেরা জানান, বড়দের পাশাপাশি স্কুল-কলেজে পড়–য়া ছেলে-মেয়েরাও এখন বেনারসি শাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা শাড়ির শ্রমিকদের সহযোগি হিসেবে কাজ করছেন। বেনারসি পল্লী এলাকায় শ্রমিকদের চোখে ঘুম নেই। দিন-রাত চলছে ডায়মন্ড, কারচুপি, পুথি, চুমকি, জড়ি দিয়ে শাড়ি তৈরির কাজ। মেসার্স জাবেদ এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী মোঃ জাবেদ বেনারসি জানান, তারা বেনারসি কাতানের পাশাপাশি জর্জেট শাড়ির উপর বিভিন্ন নকশার কাজ করছেন। আগে ঢাকা থেকে তারা এসব নকশা নিয়ে আসতেন। এখন তারা স্থানিয় ভাবে নিজেদের ডিজাইনারদের দিয়ে শাড়ির নকশা করছেন। তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদী বেনারশি পল্লীতে ক্যালেন্ডার মেশিন না থাকায় এখানে তৈরী বেনারসি শাড়ি রাজধানী ঢাকার মিরপুরে নিয়ে ক্যালেন্ডার করে নিয়ে এসে বাজার জাত করতে হয়। এতে প্রতিটি শাড়ির জন্য ২-৩’শ টাকা বেশি খরচ গুনতে হয়। ঈশ্বরদীর তৈরি বেনারসি শাড়ি মিরপুরের বলে বিক্রি করে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন বিপণী বিতানের শাড়ি ব্যবসায়িরা।