অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে ট্রেন- বাস- লঞ্চ : পথে পথে ভোগান্তি । টাঙ্গাইলে বিচ্ছিন্ন জট আর সিরাজগঞ্জে ২১ কিলোমিটার সড়কে যান চলাচলে ধীরগতির কারণে গাড়ি না ফেরায় ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর ও গাজীপুর থেকে উত্তরের পথের যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।তবে যশোর-খুলনামুখী দক্ষিণাঞ্চলের পথে উত্তরের থেকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ঠিক সময়ে গাড়ি এসে ছেড়েও যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ে।

শনিবার সকালে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাস কাউন্টারগুলোয় কথা বলে জানা যায়, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় যানজটের কারণে তাদের বাসগুলো সময়মত ঢাকায় পৌঁছাতে পারছে না। সে কারণেই ঢাকা ও গাজীপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছাড়া যাচ্ছে না বাসগুলো। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি যাচ্ছেন ইয়াসিন, আল আমিন, তানভীর ও সাদ্দাম। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা হলো তাঁদের সঙ্গে। বললেন, ১১০ টাকায় টিকিট কেটেছেন। ভেতরে জায়গা নেই। তাই ছাদে উঠেছেন।ওদের ভাষ্য, ছাদের ওঠার সময় রেলওয়ের কেউ তাঁদের বাধা দেননি। ছাদে উঠতে ভয় লাগে না?Ñজানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ঈদে বাড়ি যেতে হবে। ছাদে হোক আর যেখানে যেভাবেই হোক, তাঁরা বাড়ি যাবেন।শুধু কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনই নয়, সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সব ট্রেনের ছাদই ছিল যাত্রীতে ভরা।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, ট্রেনের ভেতরে খালি জায়গা থাকলেও অনেকে ছাদে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী কোনো যাত্রী ট্রেনের ছাদে উঠতে পারেন না। তাঁরা যাত্রীদের যথাসাধ্য বুঝিয়েছেন। তাঁরা সচেতন না হলে কিছু করার থাকে না।রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়া ২১টি ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। তবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা। সকাল নয়টার দিকে ট্রেনটি ছাড়ার কথা। কিন্তু ১১টা পর্যন্ত ট্রেনের দেখা নেই। স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলছেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে। বেলা একটার দিকে ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারে।রংপুর যাবেন আজহারুল ইসলাম। পরিবার নিয়ে সকাল সাতটার দিকে স্টেশনে এসেছেন। তিনি বললেন, চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে বসে আছেন। বেলা একটার সময় ট্রেন ছাড়লেও এমন সময় পৌঁছাবে যে তিনি বাড়ি যেতে পারবেন না। তাঁর বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আদমবিচি ইউনিয়নে।২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায় শত শত যাত্রী বসে আছেন। আতিক নামের এক যাত্রী বলেন, আমরা রংপুরের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে আছি। রেলওয়ে সূত্র বলছে, আজ সারা দিন ঢাকা থেকে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। ঈদ উপলক্ষে তিনটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চলছে। পার্বতীপুর, রাজশাহী ও দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস। এর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে গেছে। বিকেলে যাবে পার্বতীপুর। রাতে রাজশাহী এক্সপ্রেস।

ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ব্যাপক চাপ লক্ষ করা গেছে। প্রায় প্রতিটি লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়ছে।শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ৪৪টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। লঞ্চগুলোর ভেতর ও ছাদ যাত্রীতে ঠাসা ছিল।এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে দেওয়া হবে না। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ব্যবস্থাপনা ভালো।নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত সুপার হাতেম আলী বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা টার্মিনাল ও নদীতে তৎপর রয়েছেন।দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরঘাটে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। সুন্দরবন ১১ ও ঈগল ৩ নামের দুটি লঞ্চ টার্মিনালে ভেড়ার সময় পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পাশে ছিল একটি খেয়া নৌকা। লঞ্চ দুটির ধাক্কায় খেয়া নৌকার চার যাত্রী পানিতে পড়ে যান। তিনজন সাঁতরে উঠে আসতে সক্ষম হন। এক নারী নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। তাঁকে উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।সাহরির পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা লঞ্চঘাটে আসতে থাকেন। অনেকে লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ঘাটে আসেন।সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক জন্টু মিয়া বলেন, ভোর থেকেই যাত্রীর চাপ রয়েছে। বিকেলে গার্মেন্টস ছুটি হলে এই চাপ আরও বাড়বে।তুষখালী ও গলাচিপাÑএই দুই রুটে নৌযানের সংকট আছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।রুট দুটির একাধিক যাত্রী জানান, বেলা ১১টা থেকে তাঁরা টার্মিনালে বসে আছেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত কোনো লঞ্চ ঘাটে আসেনি।জানতে চাইলে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল হক খান বলেন, যে লঞ্চগুলো শনিবার রাতে সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে, সেগুলো এলেই দুই রুটের নৌযান-সংকট দূর হবে।

নদীপথের ঈদযাত্রায় ছুটি শুরুর একদিন পর শনিবার সদরঘাটে লঞ্চ যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।এদিন ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ৩৩টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায় জানিয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্রবারের ঈদযাত্রায় সারা দিনে ঘাট থেকে ১২৫টি লঞ্চ ছেড়েছে, যেখানে স্বাভাবিক সময় দিনে ৬০ থেকে ৬৫ লঞ্চ ছেড়ে যায়।এরপরও শুক্রবার তেমন যাত্রী পাননি জানিয়ে শনিবার কিছু যাত্রী আসা-যাওয়া করছে বলছেন এমভি টিপু লঞ্চের ম্যানেজার মো. ফারুক হোসেন।তবে তার অভিযোগ, লঞ্চে যাত্রী না ভরতেই কর্তৃপক্ষ ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়তে বাধ্য করছে।এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষ বলছে, যথাযথ নিয়ম মেনেই লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে।ভিড় থাকলেও বেশিরভাগ যাত্রী নির্বিঘেœ লঞ্চে উঠতে পারছেন।তবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কেবিন না পাওয়ায় ডেকে বসে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত বরিশালের যাত্রী মোবারক হাওলাদার। ক তিনি বলেন, লঞ্চ আছে, কিন্তু কোনো কেবিন পাচ্ছি না। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ডেকে বসে কিভাবে যাব?

কেবিন নেই কেন জানতে চাইলে সুন্দরবন গ্র“পের মহা-ব্যবস্থাপক আবুল কালাম ঝন্টু বলেন, কেবিন যাত্রীরা আগের থেকে বুকিং দিয়েছে। সুতরাং ঘাটে এসে এ মুহূর্তে কেবিন পাওয়া যাবে না।নিজেদের আত্মীয় স্বজনদেরও কেবিন দিতে পারছেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রীর ভিড় দেখা গেলেও তত বেশি চাপ নেই।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) হুমায়ূন কবির বলেন, সকাল ৮টা পর্যন্ত পন্টুনে যাত্রীর খুব চাপ ছিল। এসময় পন্টুনের হুড়োহুড়ি ও চাপাচাপি হলেও কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।শনিবার শুক্রবারের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে বলেই মনে করছেন তিনি।

ডেকে জায়গা না পেয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে বৃষ্টি-বাদলের শঙ্কা উপেক্ষা করে অনেকেই চড়েছেন লঞ্চের ছাদে। শনিবার সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে তোলা ছবি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিএদিকে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মওদুদ হাওলাদার।তিনি বলেন, পিক আওয়ারে অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ২৩৬ জন পুলিশ সদস্য ডিউটি দেন। অন্য সময়ও শতাধিক পুলিশ থাকে।এছাড়া নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব সদস্য ছাড়াও বিএনসিসির সেচ্ছাসেবক রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, পুরো এলাকায় ঘটনাবলি সিসি টিভির মাধ্যেমে মনিটরিং করা হচ্ছে।কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু দেখা গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হচ্ছে।হানিফ পরিবহনের একজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাইবান্ধা থেকে ঢাকা আসতে সময় লাগে সাধারণত সাত ঘণ্টা। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের যে গাড়ি ছেড়েছে, সেটি পৌঁছেছে সকাল ৭টার দিকে।

কাউন্টার ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সকালের বাসগুলো ছাড়তে তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরি হচ্ছে।কল্যাণপুর থেকে জয়পুরহাটগামী শ্যামলী পরিবহনের ৭টার বাস ছেড়েছে ৯টায়। আর নওগাঁগামী সকাল ৭টার বাস সাড়ে ৯টায়ও ঢাকায় আসতে পারেনি।নওগাঁর যাত্রী আব্দুর রহমান সুমন বলেন, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে কাউন্টারে অপেক্ষা করছি, বলছে জ্যাম। অপেক্ষা ছাড়া আর কি করব?

হানিফ পরিবহনের সকাল সাড়ে ৯টার গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় রফিকুল ইসলামকে, তিনি যাবেন গাইবান্ধায়।কাউন্টার ম্যানেজার একেএম রইসুল আলম সবুজ সকাল ১০টার দিকে বলেন, ওই গাড়ি গাজীপুরের চন্দ্রায় জটে আটকে আছে।আমাদের নন-এসি বাসগুলো ম্যানেজ করে ছাড়ার চেষ্টা করছি। এসি গাড়ি সময়মত না পৌঁছানোর কারণে রাতের চারটি গাড়ি সকালে ছেড়েছি। বিভিন্ন জায়গায় জ্যাম থাকায় এই বিলম্ব হচ্ছে।

তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় থাকা শ্যামলী পরিবহনের জয়পুরহাটের যাত্রী কুদ্দুস খান বলেন, ছাড়ার কথা ছিল ৭টায়, গাড়ি এসেছে পৌনে ৯টার দিকে।সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট আবদুল গনি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রাস্তা দুই লেইনের। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলার গাড়ি ওই পথে যায়। ঈদ উপলক্ষে গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকায় সেখানে ২১ কিলোমিটার সড়কে গাড়ি চলছে থেমে থেমে।এদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ধেরুয়া রেলক্রসিং, রসুলপুর, এলেঙ্গা, গোড়াই, সুভল্লা, করটিয়া, পাকুল্লায় খানাখন্দের কারণে যানবাহনের গতি কম। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব অংশে বড় ধরনের কোনো যানজট ছিল না বলে পুলিশ সুপার মাহবুব আলমের ভাষ্য।তিনি বলেন, রাস্তার পাশে গাড়ি থামতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জট লাগতে পারছে না। তবে সকাল ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব অংশে জট লাগছে সেতুর পশ্চিমে গাড়ি তেমন টানছে না বলে।

পাবনা এক্সপ্রেসের সকাল সাড়ে ৭টার বাস রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ের কাউন্টার ছেড়েছে সাড়ে ১০টার পর; এরপর সিরাজগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দীর্ঘ যানজটে পড়ে।মহাসড়কে যানজটের কারণে ফিরতে দেরি হওয়ায় বাস ছেড়েছে তিন ঘণ্টা পর। বিভিন্ন স্থানে যানজটের কারণে থেমে থেমে চলার পর বেলা ২টার দিকে সিরাজগঞ্জে এসে বড় রকমের জটে আটকা পড়ে।অন্যদিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বেলা দেড়টার দিকে কল্যাণপুরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।বাসে উঠা ঘরমুখী অনেক যাত্রীর আটকে পড়ার মধ্যে বিকাল ৩টায় মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন শ্রমিকরা।

গাজীপুরে উত্তরের পথের যাত্রীদের শনিবার সকালেও বাসের অপেক্ষায় কাউন্টারগুলোয় ভিড় করতে দেখা গেছে। কাউন্টারগুলো থেকে যথাসময়ে বাস ছাড়া যাচ্ছে না। কখন বাস আসবে আর কখন ছাড়া যাবে তাও কেউ ঠিক বলতে পারছে না।ভোগড়া বাইপাস সড়কে তানজিলা ট্রাভেলসের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম বলেন, উত্তরের পথে সিরাজগঞ্জের সড়কের রেস্তোরাঁগুলোয় বাস ঢুকতে ও বের হতে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত।তানজিলা ট্রাভেলসের একটি বাসের চালক দুলাল মিয়া বলেন, সিরাজগঞ্জে জটের কারণে পঞ্চগড় থেকে গাজীপুরে পৌঁছাতে ৮ ঘণ্টার পথে প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগেছে। ভোগড়া ফাহমিদা হক পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. মিনারুল ইসলাম বলেন, যান্ত্রিক ত্র“টি বা যানজটের কারণে গাড়ি ছাড়তে বিলম্ব হলে অসদাচরণ করা যাবে না – এমন নোটিশ টানিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।উত্তরবঙ্গে যাত্রী নামিয়ে ফিরতি পথে বগুড়ার মোকামতলা থেকে সিরাজগঞ্জের কড্ডা, যমুনা সেতু, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ও গোড়াইয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে বলে জানান মিতালি স্পেশাল ও ফাইভ স্টার পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, গাড়ি কখন পৌঁছাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আগাম টিকিট বিক্রি করছি না। গাড়ি এলে টিকিট বিক্রি করছি।হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শাহদত হোসেনও একই তথ্য জানান।তিনি বলেন, দূরপাল্লার নিয়মিত গাড়িগুলোর এই বিলম্বের কারণে টাউন সার্ভিসের কিছু বাস এসে যাত্রী নিয়ে রওনা হচ্ছে।সময় বেশি লাগছে বলে এসব টাউন সার্ভিসের বাস অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলে জানায় কয়েকজন চালক।বগুড়ার যাত্রী রমজান আলী বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গাড়ির জন্য পাঁচ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। তার পরও বাস না পেয়ে টাউন সার্ভিসের একটি বাসে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হচ্ছি।এতে মাথাপিছু ১০০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। অন্য সময় এ ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শনিবার সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে বলে জানান নাওজোর পুলিশ ফাঁড়ির ওসি আব্দুল হাই।কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ হোসেন সরকার বলেন, তিনি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় দায়িত্ব পালন করছেন।শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ পথে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যায়। চন্দ্রা, শফিপুর, কোনাবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি দেখা গেছে।গাজীপুরগামী বলাকা পরিবহনের যাত্রী জয়নাল আবেদিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টঙ্গী থেকে শিববাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠেছি। চান্দনা-চৌরাস্তায় ১০-১৫ মিনিটের পথে যানজটে পড়ে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা।

সরেজমিনে স্টেশনে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই বাস না পেয়ে ট্রাক, পিকআপ বা বিকল্প পরিবহনে গন্তব্যে যাচ্ছে।উত্তরবঙ্গের গাড়ির জন্য কল্যাণপুর ও গাবতলীর কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে দেখা গেলেও দক্ষিণাঞ্চলের জন্য সেই চিত্র ছিল ভিন্ন; সেখানে বাস ছিল পর্যাপ্ত, ঠিক সময়ে এসে বাড়ির পথ ধরতে পেরেছেন যাত্রীরা।পূর্বাশা পরিবহনের বেলা আড়াইটার গাড়ি ধরতে ছোটভাইকে নিয়ে গাবতলীর কাউন্টারে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আফরিন আফরোজ; ঢাকায় যানজটের কথা বিবেচনা করে আগে বাসা থেকে বেরিয়ে কাউন্টারে পৌঁছে যান দুই ঘণ্টা আগেই।

আফরিন বলেন, আসছি কেরানিগঞ্জ থেকে। যানজট হবে ভেবে আগেই রওনা করছিলাম, কিন্তু পৌঁছে গেছি ৪৫ মিনিটেই। এখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। অন্য গাড়ি ঠিক সময়ে যাচ্ছে, আমারটাও যাবে।ফেরিতে ঘাটে ঝামেলা না থাকলে নির্বিঘেœ পৌঁছে যাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।আফরিনের কথার মিল পাওয়া যায় গাবতলীতে যশোর-খুলনাগামী ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মিজানুর রহমানের কথায়ও।বেলা ২টায় তিনি বলেন, পাটুরিয়া ফেরিঘাটে কোনো ঝামেলা না থাকায় আমাদেরকে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। বাস ঠিক সময়ে যাচ্ছে, ঠিক সময়ে ফিরছে। টিকেট থাকায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্রিও করতে পারছি।বরিশালমুখী শাপলা ট্রান্সপোর্টের এক কর্মীও একই ধরনের তথ্য দেন। ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভিড় থাকলেও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজ শনিবার যানজট কিছুটা কম। পুলিশের ভাষ্য, একটি কারণে আজ যানজট কিছুটা কম। সেটা হলো, ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এ ছাড়া শনিবার পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে যানজট নিরসনের পাশাপাশি চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মলমপার্টির তৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য শুক্রবার রাত ১২টা থেকে মহাসড়ক দিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরিসহ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের যানবাহন চলাচল সাত দিন বন্ধ থাকবে। মহাসড়ক যানজটমুক্ত করতে শুক্রবার সকাল থেকেই পণ্যবাহী যানবাহন আটকে দেওয়া হয়েছিল। জট কমার পর ধীরে ধীরে তা ছেড়ে দেওয়া হয়।দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, যানজট নিরসনে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।