ঝিনাইদহের জহির রায়হান। অনেকে চেনে গাছ পাগল বা গাছ প্রেমিক জহির। সামান্য অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন জহির পেশায় রংমিস্ত্রি। কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে চালান সংসার। সেই আয়ের কিছুটা বাচিয়ে তিনি সঞ্চয় করেন না। সংসার খরচ থেকে বাঁচানো অর্থ দিয়ে তিনি ১৫ জন ঝরে পড়া এতিম ছেলে ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালান। তার হাতে লাগানো গাছ চোখে পড়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর গাছে গাছে দেখা যায় মাটির কলস। নিজের ও মনীষিদের বানী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখেন তিনি। পরিবেশ রক্ষায় “বৃক্ষ রোপণ করুন ধরিত্রীকে বাঁচান, ‘বৃক্ষ আপনার দুর্দিনের বন্ধু’, ‘একটি বৃক্ষ একটি জীবন’, ‘বৃক্ষ রোপণ দেশসেবার একটি বড় মাধ্যম’, ‘বৃক্ষ পৃথিবীর পোশাক” এ ধরনের বাণী অসংখ্য দেয়ালে লক্ষ্য করা যায়। তার দেয়াল লিখনের উদ্দেশ্যে সচেতনা বাড়ানো। সারা বাংলাদেশে মাটির কলস দিয়ে কৃত্রিম পাঁখির বাসা তৈরী হচ্ছে তা সর্বপ্রথম জহির রায়হানের পরিকল্পনা আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। রংমিস্ত্রি হলেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন পরিবেশ রক্ষায়। দেশের জলবায়ু রক্ষায় সামাণ্য আয় থেকে তৈরী করছেন নার্সারী। আর সেই নার্সারী থেকে ফলজ, বনজ ও ঔষধী বৃক্ষগুলো বিনামুল্যে বিতরণ করছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জহির রায়হানের জন্ম এক হতদরিদ্র পরিবারে। একটু বড় হতেই শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে হয় তাঁকে। গাছের প্রতি মমত্ববোধ ছিল তাঁর শৈশব থেকেই। নিজের বসতবাড়ি ছাড়া আর কোনো জমি না থাকায় নিজের ও অন্যের বাড়ির আঙিনায় শুরু করেন গাছ লাগানো। কোনো বাড়িতে নতুন শিশুর জন্ম হলে জহির রায়হান সেই বাড়ির আঙিনায় শিশুটির নামে রোপণ করে আসেন দু-তিনটি গাছ। তিনি ওই বাড়ির কর্তাকে বোঝান, শিশুটির সঙ্গে বড় হবে গাছগুলো। একদিন শিশুটির লেখাপড়া কিংবা বিয়ের খরচ জোগাতে এ গাছগুলো কাজে আসবে। গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার জন্য জহির রায়হান বিকল্প কিছু একটা করতে চাচ্ছিলেন।

তার সেই আন্দোলনের সাথে নতুন করে তিনি যোগ করেছে জলবায়ু রক্ষার আন্দোলন। “দেশ আমার, ভাবনাও আমার” শ্লোগানে জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে আয়োজন করছেন পরিবেশ রক্ষার আলোচনা সভা। এরই অংশ হিসেবে শনিবার সদর উপজেলার চন্ডিপুর বাজারে আয়োজন করেন আলোচনা সভার ও গাছ বিতরণের। সেসময় মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা শেষে নিজের লিজ নেওয়া জমিতে উৎপাদিত পেয়ারা, বকুল, মেহগনি, জলপায়, হরিতকি ও বহেরা গাছের চারা বিনামুল্যে বাজারে আগতদের মাঝে ১ হাজার গাছের চারা বিতরণ করেন।

এছাড়াও ঘোষনা দেন যদি কারও গাছ মারা যায় তাহলে নতুন করে গাছ লাগিয়ে দিবেন তিনি। গাছ পেয়ে চন্ডিপুর গ্রামের সামছুল হক ও আকবার আলী বলেন, জহির রায়হান তাদের দুটি গাছ বিনামুল্যে দিয়েছেন এবং তা রোপনের নিয়মও বলে দিয়েছেন। যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। বৃদ্ধ সামছুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবতর্ণ হচ্ছে এ ধরনের কোন ধারনা আমাদের ছিল না। আজ এই আলোচনা সভায় বক্তব্য শোনার পর বুঝতে পারছি আমাদের পরিবেশ পরিবর্তণ হচ্ছে। তিনি আশাব্যক্ত করেন বাড়ীর আঙিনায় তিনি গাছের চারা রোপন করবেন এবং আর পরিবেশ দুষন করবেন না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে জহির রায়হান বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই আমাদের আবহাওয়া পরিবর্তণ হচ্ছে। সময়মত বৃষ্টি হয় না। আবার অতিবৃষ্টির কারণে ফসলহানি হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্যদেশ পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলন শুরু করেছে। আমাদেরও এই আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিবছর বিনামুল্যে গাছের চারা বিতরণ করেন। আমাদেরও সাধ্যমত গাছের চারা রোপন করতে হবে। তাহলে জলবায়ু পরিবর্তণের প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারবো। তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেছেন।