বিক্ষোভের মধ্যেই জার্মানির হামবুর্গ শহরে শনিবার পর্দা নামছে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের এবারের আসরের। নানা বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মতানৈক্যের মধ্যেও শেষ মুহূর্তে সম্মেলনের একটা চূড়ান্ত বিবৃতি তৈরিতে কাজ করছেন মধ্যস্থতাকারীরা। কর্মকর্তারা বলছেন এক্ষেত্রে একমাত্র অমীমাংসিত ইস্যু হিসেবে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি। এবারের সম্মেলনকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ­াদিমির পুতিন এবং রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান তিন নেতাই সম্মেলনের সাইডলাইনে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভøাদিমির পুতিন। তবে তিনজনকে নিয়েই অস্বস্তি রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের। তারপরও যৌথ বিবৃতি প্রকাশের জন্য একটা ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করছেন কর্মকর্তারা। শনিবার দিনশেষে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হবে।এরইমধ্যে বাণিজ্য নীতি নিয়ে একমত হয়েছেন সদস্য দেশগুলোর নেতারা। সবগুলো দেশই সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-এর সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেছেন, শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।প্রথম দিন শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে সকালের খাবার খান আয়োজক দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল। তিনি এবারের সম্মেলনকে ‘খুবই কঠিন’ বলে মন্তব্য করেন।

শনিবার অবশ্য সম্মেলন নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। তারা জানান, সম্মেলনের ফলাফল ইতিবাচক। আমাদের একটি ইশতেহার রয়েছে। এটি হচ্ছে অনিষ্পন্ন জলবায়ু ইস্যু।শুক্রবার সকালে সম্মেলনের প্রথম দিনেই করমর্দনের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎ করে স্বল্প সময়ের জন্য কথা বলেন ট্রাম্প ও পুতিন। এরপর তাদের মধ্যে আরও দীর্ঘ আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, ৩০/৪০ মিনিটের বৈঠকের কথা থাকলেও দুই নেতার মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিটের কথা হয়েছে।ম্যারাথন বৈঠকে মার্কিন নির্বাচনে হ্যাকিং এবং এতে রুশ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগসহ পুতিন ও ট্রাম্প অনেক বিষয়ে কথা বলেন। ইউক্রেইন, সিরিয়াসহ অন্যান্য সমস্যা এবং কিছু দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে তাদের কথা হয়। আলোচনায় উঠে আসে সাইবার নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গও। তবে আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলো গত বছরের মার্কিন নির্বাচনে রুশ হ্যাকিং হস্তক্ষেপ’ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ‘মার্কিন নির্বাচনে রুশদের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না, পুতিনের এমন মন্তব্য মেনে নিয়েছেন ট্রাম্প।’ তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন বলেছেন, ব্যাপারটি এখনও স্পষ্ট নয়, যেহেতু এই অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে, তারপরও এই ঘটনাটি নিয়ে রুশদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী একটি সমঝোতায় আসতে হবে।এদিকে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের প্রতিবাদকারীদের অনেকে মানবিক কারণে ফ্যাসিস্ট অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অনেকে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ব্যানার দেখা গেছে জার্মানির রাজপথে। তবে সবকিছু সামলে নিয়ে এবারের সম্মেলনের একটা সুন্দর ইতি টানতে চান আয়োজকরা। সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিই বলে দেবে তাদের সে চেষ্টা বাস্তবে কতটা সফল হয়েছে! সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে।