পুরান ঢাকায় দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর আগামী ৬ আগস্ট রায় দেবেন হাইকোর্ট।বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার শুনানি শেষে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন।২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান। আর আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, এস এম শাহজাহান, লুতফর রহমান মন্ডল, সৈয়দ আলী মোকাররম, সৈয়দ শাহ আলম, মো. আব্দুস সালাম, মো. ইসা, সৈয়দ মাহমুদুল আহসান।পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মোমতাজ বেগম। ফাঁসির আদেশ পাওয়া আট আসামি: রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা, রাজন তালুকদার ও মীর নূরে আলম লিমন।

যাবজ্জীবন কারাদন্ডেরর ১৩ আসামি: গোলাম মোস্তফা, এ এইচ এম কিবরিয়া, ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন।আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া রাজন ও লিমন এবং যাবজ্জীবনের আসামি ইউনুস, তমাল, আলাউদ্দিন, তাহসিন, ইমরান, আজিজ, আল-আমিন, রফিকুল, পাভেল, কামরুল ও মোশাররফ নিম্ন আদালতে রায়ের সময় পলাতক ছিলেন।বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়।মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুজন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আটজন কারাগারে আছেন। আসামিদের সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে শুনানি শুরু হয়।নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদন্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে সোমবার রায়ের এই দিন ঠিক করে দেয় আদালত।চার বছর আগে আলোচিত এ মামলার রায় আটজনকে মৃত্যুদ- ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয় গত ১৬ মে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর পরে সাংবাদিকদের বলেন, আটটি আপিল, সাতটি জেল আপিল ও ডেথরেফারেন্সের উপর মোট ১৫ কার্যদিবস শুনানি হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত যে সাজা দিয়েছিল আমরা যুক্তিতর্কে সেগুলো তুলে ধরে দন্ড বহাল রাখার আরজি জানিয়েছি।২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনার খবর ও ছবি সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। আসামিরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের কর্মী হওয়ায় সরকারকে বিরোধীদলের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।পরের বছর ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন তিনি।যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বেআইনি সমাবেশের আরেকটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই ১৩ জনকে ছয় মাস করে কারাদন্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।