বিভিন্ন সেক্টরে দেশ উন্নত হলেও মানের দিক থেকে দেশের বিচার বিভাগকে শূন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেনে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মামলার অনুপাতে বিচারক নিয়োগ হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মামলার তুলনায় আমাদের বিচারপতিদের সংখ্যা অর্ধেক।

শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দেশের নারী বিচারকদের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকেরা অগ্রগামী।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আপিল বিভাগে আরও ৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আমাদের দেশে একটা রেওয়াজ আছে, পলিটিক্যাল সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্ট বিভাগে ইচ্ছামতো বিচারপতি নিয়োগ দেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলাকে নির্বাহী বিভাগ রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করলেও এ বিষয়ে কথা বলে যাব।আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। আমি যে চেয়ারে বসি, সেখানে বৃষ্টির পানি পড়ে। নতুন একটি এনেক্স ভবন না করলে মাঠে বসে বিচার কাজ করতে হবে। মাননীয় মন্ত্রী, বিচার বিভাগ কিভাবে চলবে?এসকে সিনহা বলেন, ‘নারী বিচারকদের পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। পৃথিবীর যেকোনও দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকেরা অগ্রগামী। আমি চেষ্টা করছি, নারী বিচারপতিদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। সরকার এগিয়ে এলেই হাইকোর্টে আরও নারী বিচারক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এদেশের বিচার বিভাগের অহঙ্কার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এই পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি। নারী বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রিয় নারী বিচারকেরা মনে রাখবেন, বিচারকের জীবন মানেই ন্যায় বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া। আর এই দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের। বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনের সভাপতি তানজীনা ইসমাইলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। অনুষ্টানে আরো বক্তৃতা করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, সংবর্ধিত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। অনুষ্ঠানে সুপ্রিমকোর্টের উভর বিভাগের বিচারপতি ও দেশের নারী বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে নতুন ভবন নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিচার বিভাগের স্বার্থে তার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক এবং বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি। এ অবস্থান তৈরি করতে তাঁকে পার করতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি। তবে সবকিছু জয় করে তিনি এখন দেশ ও বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ ও এদেশের বিচার বিভাগের অহংকার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এই পেশায় এসেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।আইনমন্ত্রী দেশের সবক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, সমাজকে আর পুরুষশাসিত সমাজ বলার যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা আলোচিত অনেক রায় প্রদানের মাধ্যমে বিচার বিভাগে সম্মানের আসন তৈরি করে নিয়েছেন। তার হাতে এখন অখন্ড অবসর। তিনি তাঁর সুদীর্ঘ ৪২ বছরের বিচারিক জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন তাঁর লিখনীর মাধ্যমে। তাঁর আলোকিত কর্মজীবন নবীন বিচারকদের বিশেষ করে নারী বিচারকদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে।