বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চাইলে পারবেন না। অতীতেও কেউ পারেনি। এখানে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়।শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ফোরাম আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে অর্থমন্ত্রীর করা মন্তব্যের জবাবে তিনি একথা বলেন।মওদুদ বলেন, সরকারের সিনিয়র এক মন্ত্রী বলেছেন, যতবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হবে ততবার এটা সংসদে পাশ করবো। এটা খুবই ভয়ঙ্কর কথা। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে সরকারের সুপ্রিম কোর্টের ওপর আস্থা নেই। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ষোড়শ সংশোধনীর এই রায় কেবল ঐতিহাসিক নয়, এর মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কথা প্রকাশিত হয়েছে। যারা এই রায়কে অবমূল্যায়ন করতে চান তাদের পস্তাতে হবে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নওয়াজ তো পাকিস্তানের সব থেকে জনপ্রিয় নেতা। সুপ্রিম কোর্ট তাকে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন।সংবিধান ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ১১৬ হচ্ছে ৭২ এর মূল সংবিধানের অংশ। ৭২ এর সংবিধানে বলা আছে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি, বদলি, পদোন্নতি সুপ্রিম কোর্টের ওপড় ন্যস্ত থাকবে। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আপনারা এটা পরিবর্তন করেছেন। আমাদের প্রধান বিচারপতি তো ‘৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে চান। অথচ আপনারা বলছেন, প্রধান বিচারপতি নাকি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিতে চান।তিনি বলেন, সরকারের একজন অত্যন্ত সিনিয়র মন্ত্রী তিনি কালকে (শুক্রবার) বলেছেন যতবার এই ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হবে, ততবারই আবার তারা সেই বিল বা আইন পাস করবেন। অর্থাৎ সংবিধানকে সংশোধন করবে। এটা একটা ভয়ঙ্কর কথা।এটাতে প্রমাণ করে যে, সুপ্রিম কোর্ট বা আমাদের উচ্চতম আদালত বা বিচার বিভাগের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নাই এবং তারা এই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরত নিয়ে সংবিধানে আনা ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায় নিয়ে শুক্রবার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।তিনি বলেন, এটা আমরা অ্যাসেম্বলিতে আবার পাস করব.. এইআইনটা। এই কন্সটিটিউশনাল অ্যামেন্ডমেন্টটা আমরা আবার পাস করব এবং অনবরত করতে থাকব। দেখি জুডিসিয়ারি কতদূর যায়।সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মওদুদ বিচার বিভাগের সঙ্গে বিরোধে না যেতে ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করে দেন।সরকার যদি মনে করেন তারা বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামবেন। তাহলে আমি বলতে চাই যে, সেই প্রতিযোগিতায় আপনারা পরাজিত হবেন।কারণ যারাই বিচার বিভাগের উপর হাত দিয়েছে, সেই হাত পুড়ে যায়। বিচার বিভাগ সারভাইভ করে যায়, পার্লামেন্ট সারভাইভ করতে পারে না, সরকারও সারভাইভ করতে পারে না।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে দেশের মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে বলেও মনে করেন এই বিএনপি নেতা।এই রায় শুধু ঐতিহাসিক নয়, এই রায় দেশের ১৬ কোটি মানুষের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।এই রায়কে জাতীয় দলিল বলে আমরা আখ্যায়িত করতে পারি।নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন : প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দুদকের মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মওদুদ।

“চিকিৎসা শেষ হলে তিনি (খালেদা) অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন। তার এই বিদেশ সফর নিয়েও নানারকম কথা-বার্তা বলা শুরু করেছে। আদালত থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে, কেন তিনি আদালতে উপস্থিত হবেন না।অথচ আদালত জানেন যে তিনি বিদেশে আছেন।নিজের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ঘরোয়া সভার কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।নাগিরক ফোরামের সভাপতি আবদুল্লাহিল মাসুদের সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি পারভেজ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস এম হাসান তালুকদার বক্তব্য রাখেন।সভার বিশেষ অতিথি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন যানজটের কারণে দেরিতে উপস্থিত হন, তারা বক্তব্য রাখেননি।