বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, কারও গাফিলতি, অনৈতিক কর্মকা- ও অসহযোগিতায় হজ পালনের কার্যক্রম বিঘিœত হলে তা বরদাশত করা হবে না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সোমবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে হজসংক্রান্ত জরুরি সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুক, বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) এনামুল বারী, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম জিয়াউল হক, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদ, হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।সভায় জানানো হয়, এ বছর বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে ৬২ হাজার ৫৪৭ জন ইতিমধ্যে সৌদি আরব চলে গেছেন।

মন্ত্রী বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্বিঘেœ হজ পালনের ব্যবস্থা করতে সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করেছে। তবে, এখনো প্রায় ১৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসার জন্য পাসপোর্ট হজ অফিসে জমা হয়নি। ১৬টি এজেন্সি এখনো একজনও হজযাত্রী পরিবহন করেনি। অন্যদিকে অভিযোগ এসেছে, অনেক হজ এজেন্সি হাজিদের জন্য বাড়িভাড়া করেছে ২০ আগস্টের পর। তিনি বলেন, এটি সত্য হলে ২০ আগস্টের পর যে চাপ তৈরি হবে, তা সামাল দিতে প্রয়োজনীয় এয়ারক্রাফট পাওয়া যেমন দুষ্কর হবে, তেমনি অতিরিক্ত স্লটও পাওয়া যাবে না। তাই বিপর্যয় এড়াতে ভিসা হয়েছে, এমন হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠাতে হজ এজেন্সিগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে।মন্ত্রী আরও বলেন, হজযাত্রীর অভাবে ইতিমধ্যে বিমানের ২২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে; যা বিমানকে আর্থিক ক্ষতি ও ইমেজ সংকটের মুখোমুখি করেছে। এর দায় বিমানের ছিল না। তবুও ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার হিসেবে হজযাত্রীদের পরিবহন নিশ্চিত করতে বিমান প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য হজ ফ্লাইটের সময়সীমা ২৬ আগস্ট থেকে বাড়িয়ে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত করতে সৌদি আরবের জেনারেল অথোরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশন’-এর প্রতি অনুরোধপত্র প্রেরণ করা হবে। নতুন পাওয়া ১৪টি স্লটের অতিরিক্ত আরও ৭টি স্লট পরিচালনা করতে আগস্ট থেকে বিমানের আবুধাবির দুটি, ব্যাংককের তিনটি, দোহারের পাঁচটি, দুবাইয়ের একটি, কাঠমান্ডুর দুটি, কুয়ালালামপুরের একটি, লন্ডনের তিনটি, মাসকাটের একটি, রিয়াদের তিনটি এবং দাম্মামের দুটি ফ্লাইট বাতিল অথবা কমিয়ে আনা হবে। সেই সঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে লিজকৃত একটি এয়ারক্রাফট ২০ আগস্ট থেকে হজযাত্রী পরিবহন করবে বলে তিনি জানান। চলমান সঙ্কট নিরসনে সোমবার সকালে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, যেসব এজেন্সি সরকারকে বিব্রত করতে হজ যাত্রা বিঘিœত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নবে সরকার।

তিনি বলেন, হজ যাত্রায় ভোগান্তি পরিবহন সঙ্কটের জন্য হয়নি, বরং ভিসা জটিলতায় যাত্রী সঙ্কটের কারণে হয়েছে। এখনো ১৫ হাজার যাত্রীর ভিসা হয়নি। এমনকি ১৬টি এজেন্সি একজন যাত্রীও সৌদি আরবে পাঠায়নি। মেনন আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আটকেপড়া হজ যাত্রীদের জেদ্দায় পৌঁছাতে আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি রুটে ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। কিছু ফ্লাইট সীমিতও করা হয়েছে।তবে যাদের গাফিলতিতে হজ যাত্রা বিঘিœত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান বিমানমন্ত্রী।এদিকে, হজ যাত্রীদের জন্য সোমবার ১০টি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রত্যেকটি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা পূর্ণ থাকায় কোনো হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। হজ যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সোমবার ৫টি নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরেকটি ফ্লাইটের বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকটি ফ্লাইটেই ৪১৯ জন করে যাত্রী যাবেন। ফ্লাইটগুলোতে যাত্রী সংখ্যা পূর্ণ থাকায় কোনো হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে তারা।এছাড়াও সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সেরও ৪টি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৬২ হাজার ৭৪৩ জন হজ যাত্রী সৌদি আরব গেছেন। এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ভিসা জটিলতা, মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি ও বাসা ভাড়ায় বিলম্বের কারণে এখনো ৬২ হাজারের বেশি যাত্রী জেদ্দায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।