সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন কাজের বিষয়ে হাই কোর্টের নানা নির্দেশনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।তিনি বলেছেন, এত কাজ করছে হাই কোর্ট! এখন দেখি সরকারের আর কোনো কাজ করার দরকার পড়ে না। সবই হাই কোর্ট বলে দিচ্ছে।খাল খনন থেকে শুরু করে একজন দারোয়ান সরানোর নির্দেশনা পর্যন্ত হাই কোর্ট দিচ্ছে। কালকেও একটা নির্দেশ দেখলাম কোথায় যেন কী হয়েছে, হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। হজে যাওয়া নিয়েও নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সতীর্থ-স্বজন’ আয়োজিত ‘তিনিই বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আদালতের কাজ নিয়ে এমন অসন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নাসিম।

একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার হাই কোর্ট ভিসা জটিলতায় আটকে পড়া হজযাত্রীদের ৪৮ ঘণ্টায় সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেয় সরকারকে। এর আগেও ‘জনস্বার্থে’ বিভিন্ন রিট আবেদনে নদী উদ্ধারসহ নানা বিষয়ে হাই কোর্টের নির্দেশনা এসেছিল।আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পর সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধন এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার পাখি শিকার করেছে।সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর তিন বছর আগে ষোড়শ সংশোধনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে নিয়েছিল সরকার।হাই কোর্ট ওই সংশোধন অবৈধ ঘোষণার পর সরকার আপিল করেছিল। কিন্তু আপিল বিভাগও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতির কিছু পর্যবেক্ষণ সরকারকে ক্ষুব্ধ করেছে।আপিল বিভাগের এই রায়ে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখার কথা জানিয়ে নাসিম বলেন, আজকে রায় বলেন, পর্যবেক্ষণ বলেন, এগুলো শুরু হয়ে গেছে। কারণ চক্রান্তের তো নানা পদ থাকে, নানা অলিগলি থাকে। এখন নতুন রূপে, নতুনভাবে চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে।জাতির জনককে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে যখন বিচারের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে আদালতের ভূমিকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পঁচাত্তরে হত্যাকা-ের শিকার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর ছেলে নাসিম।কোথায় ছিল সে সময় আদালত? কেউ তো বলেনি আমি বিচারক, ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। আমি নির্দেশ দিলাম এই কালো আইন বাতিল করে বিচার করা হোক। কোনো আদালত নির্দেশ দেওয়ার সাহস পায়নি।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদের সমালোচনাও করেন নাসিম।মওদুদের কথা শুনে এখন প্রেস ক্লাব গরম হয়ে উঠে। কী আইনের কথা বলে এই লোকটি? এই ব্যক্তি যখন আইনমন্ত্রী ছিল ২০০১ সালের পরে কত বার বলেছেন- বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাচ্ছে না, বিচারক পাওয়া যাচ্ছে না’।কত বড় ভন্ড এই লোকটা দেখেন, রায় হওয়ার পরও প্রায় পাঁচ বছর দন্ড কার্যকর হয়নি খালি আপিল করা হয়নি বলে। সে বিচারক পরিবর্তন করে দিয়েছে রায় দেওয়ার আগে। আজ এই ব্যক্তি বিচারকদের নিয়ে বড় বড় কথা বলে।শেখ হাসিনাকে হটানোই ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান উদ্দেশ্য বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এই সদস্য। খালেদা জিয়া স্লোগান দিয়েছিল শেখ হাসিনাবিহীন নির্বাচন করতে হবে। এখন শেখ হাসিনা হচ্ছে টার্গেট। শেখ হাসিনা না থাকলে সব ঠিক আছে। শেখ হাসিনা না থাকলে ইচ্ছা মতো দেশ চালানো যাবে, ইচ্ছামতো রাজাকার দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।সাংবাদিক রাহাত খানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান।নাসিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায় নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত নিরসনের জন্যই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ।এ নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদকের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করা নিয়ে অনেকে রাজনীতি করছেন, নানা কথা বলছেন, বিতর্ক করছেন। এ নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই।যখন যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার প্রধানবিচারপতির সঙ্গে দেখা করে, তখন তো কোনো কথা বলেন না।রায়ে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস একটি মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বিতর্ক দ্রুত নিরসনে ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। অন্য কিছু নয়, বলেন হানিফ।