গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাপ্রচেষ্টা মামলায় ১০ আসামীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়ে রোববার রায় ঘোষণা করেছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২।ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২এর বিচারক মমতাজ বেগম এ রায় ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আনা মামলায় ২৪ আসামির মধ্যে ১০ জনকে মৃত্যুদন্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তিনজনকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ মামলার আসামিদের মধ্যে ১০ জন খালাস পেয়েছে।সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। মুফতি হান্নান আজ রায় হওয়া মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ২০০৪ সালে আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার চেষ্টায় গ্রেনেড হামলার মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ের পর চলতি বছর ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় মুফতি হান্নান বাদে আসামী ছিলেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে নয় জনকে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছে চারজন।রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান খান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে মুফতি রউফ ওরফে আবদুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর। যাবজ্জীবন কারাদন্ড পেয়েছেন আসামী মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ। ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড পেয়েছেন আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও সরওয়ার হোসেন মিয়া।বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কারাদন্ড পাওয়া নয়জন হলেন ইউসুফ ওরফে মুসা ওরফে আবু মুসা (পলাতক), আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ ওরফে মেহেদী হোসেন ওরফে গাজী খান, ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মাহমুদ আজহার ওরফে মামুনুর রশীদ, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে শিমন খান, শাহনেওয়াজ ওরফে আজিজুল হক ও শেখ মো. এনামুল হক (পলাতক)। এ মামলায় চারজন খালাস পেয়েছে।২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী বোমা দেখতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে পরপর দুই দিনে সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ও ৮০ কেজি ওজনের বোমা উদ্ধার করে। শেখ হাসিনা তার দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত ওই কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। এ ঘটনায় ওই দিনই কোটালীপাড়া থানার পুলিশ বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা করে।সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান তদন্ত শেষে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল যে অভিযোগপত্র দেয়, তাতে আসামি করা হয় ১৬ জনকে। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন নতুন করে ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১০ সালে গোপালগঞ্জ আদালত থেকে মামলা দুটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। গত ১০ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। এর আগে মামলায় ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।