প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, সকল রাজনৈতিক দলের বিশ্লেষন থাকলে ও নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়, তা হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে। আমরা সকল দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন চাই। আমরা নিশ্চয়তা দেব সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হবে। অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন হবে। আশা করি সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এবং তা নির্বাচন কমিশনের সদস্যবৃন্দ যারা শপথ গ্রহণ করেছেন সেই শপথের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আস্থা, পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা এবং শ্রদ্ধা রেখে আমরা নির্বাচন করবো যাতে কোন রকমে সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যাত্যয় না ঘটে। এটা সম্ভব হবে না যদি আপনাদের সকলের সহযোগিতা না থাকে, যদি আপনাদের অংশগ্রহণ না থাকে, যদি আপনাদের কার্যকরভাবে আমাদের পাশে না পাই। আপনাদের সহযোগিতা না পেলে ১১ কোটি ১৭ লাখ লোকের (ভোটারদের) সেবা দিতে পারবো না যদি আপনাদের সহযোগিতা না থাকে।

তিনি মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দিন মন্ডল, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেকুজ্জামান, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. আমানত হোসেন খান, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান লস্কর মিঠু প্রমূখ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের দেশে ৬০ভাগ লোক যুবক, যাদের বয়স ৪০বছরের নীচে। এটা একটা সম্পদ। যা পৃথিবীর বহু দেশে নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের দেশে এসে বলেছিলেন, তার দেশে আছে ৫০ভাগের কাছাকাছি। বাংলাদেশে আছে ৬৫ভাগের উপরে। তারা হলেন দেশের শক্তি। ২০০০ সালে যাদের জন্ম আজকে তারা ভোটার হয়ে যাবে। তারা ভোটার হয়ে দেশে নেতৃত্ব দেবে, দেশে ভোট দেবে, ভোট দিয়ে তারা নেতা নির্বাচন করবে, এবং নেতাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। তারা নিজেরাও নেতৃত্বের সুযোগ গ্রহণ করবে। যখন তাদের বয়স ১৮বছর পেরিয়ে যাবে, তখন তারা এ কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করবে।

তিনি আরো বলেন, যারা বিদেশে থাকেন তারা যদি দেশে আসেন, ভোটার হতে চান, তাদের প্রাধান্য দিয়ে দেশে থাকতে থাকতে তাদের হাতে যাতে এনআইডি কার্ড তুলে দেয়া যায় তার জন্য (আজ ঢাকার অফিসে গিয়েই) বিশেষ আদেশ দেয়া হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, স্মার্ট কার্ড একটি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ কার্ড। এটির মাধ্যমে শুধু ভোট দেবেন তা নয়, এর মধ্যে ২৮টি সেবা রয়েছে। এ থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হন সে ব্যপারে অনুরোধ করি। এটি করতে গিয়ে নানাভাবে ভ’ল হবে, উন্নয়ন হবে। সেটি সঠিক করার সুযোগ আছে। আমার স্মার্ট কার্ডটিও পাঁচবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এটা হতে পারে, তা আপনারা শোধরিয়ে নেবেন। কারণ প্রথমবার এটি তৈরিতে যারা ছিলেন তারা মাত্র সাত দিনের ট্রেনিং নিয়ে ওই কাজে যুক্ত হন। অনেক সময় নাম লিখতে গিয়ে ক-এর স্থলে খ হয়েছে। অনেকের বয়সের ভুল হয়েছে। এটা শোধরানোর সুযোগ আছে, আপনারা শুধরিয়ে নেবেন। এনআইডিতে ভুল থাকতেই পারে। বর্ষার জন্য আগামীতে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম প্রতিবছরের জুলাইয়ের পরিবর্তে সেপ্টেম্বর কিংবা সম্ভব হলে মার্চ থেকে শুরু করা হবে।

তিনি আরো বলেন, রাজনীতি থাকবে, রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে যেন সংঘাত না হয়। যে যার দল করবেন, সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে, যারা যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, আদালতের মাধমে প্রমানিত হয়েছেন, তাদের ভোটার করবেন না, তারা ভোটার হতে পারবেন না, নির্বাচনে অংশ নিতে গ্রহণ করতে পারবেন না।

নির্বাচনে না ভোটের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, না ভোটের বিষয়ে বলেছে অনেকে। এটা আমাদের বিষয় নয়। এটা আইনের বিষয়, সংসদের বিষয়, সরকারের বিষয়। এটা আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারবো না। এ ব্যাপারে আইন প্রনয়ণ করবে সংসদ। সেখানে ওই বিষয়ে যদি তাদের বিবেচনা হয় তবে হবে।

মতবিনিময় সভাশেষে স্থানীয় হাইলজোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।