প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে নিজেই বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন দাবি করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ করে এ বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারেন।ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রায়ের প্রতিক্রিয়া আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন জাসদ সভাপতি ইনু।তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি নিজেই বিতর্কের সূচনা করেছেন, সরকার করেনি। তিনি একটিবিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন এবং তিনি একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।বিতর্কের সূচনা করে তিনি জনমনে নিজেকে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিতে একটি বিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে গেছেন। প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে পদত্যাগ করে এই বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে পারেন; বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি পুনঃস্থাপনে সাহায্য করতে পারেন।উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ষোড়শ সংশোধনীতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে আনা পরিবর্তন অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতির সমালোচনা শুরু হয়।ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে এস কে সিনহা ‘জাতীয় সংসদ ও বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করেছেন’ অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ সরকারি দলের নেতারা রায়ের কড়া সমালোচনা করছেন। বাক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সিনহাও।অন্যদিকে জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে ক্ষমতাসীনদের পাল্টা সমালোচনায় রয়েছে বিএনপি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের উদ্দেশ্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নয় মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে জাসদ নেতা ইনু বলেন, “এটি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বকে বিতর্কিত করা ও সামরিক শাসনের জঞ্জালকে পুনরায় টেনে আসার অপপ্রয়াসমূলক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও বিদ্বেষমূলক।রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অধিকার স্বীকৃত মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রায়ের পরও রাজনৈতিক উসকানিমূলক বক্তব্য, রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে বলেই রায় দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কিছুটা তীব্র। পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে এনে উনি (প্রধান বিচারপতি) নিজেই উত্তেজনা বাড়িয়েছেন।তবে এ রায় কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেনি, সরকার ও বিচার বিভাগকে মুখোমুখিও করেনি। এ রায়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও কিছু নেই। সরকার পরিচালনায় কোনো প্রভাবও ফেলবে না, কোনো অচলাবস্থাও তৈরি হবে না।ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ‘উল্লসিত হয়ে মিষ্টি বিতরণকারীরা’ চক্রান্তের রাজনীতির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন জাসদ একাংশের সভাপতি।ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায় যুক্তিনির্ভর নয় দাবি করে ইনু বলেন, “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও ত্রুটিমুক্ত নয়। আমরা বিচারপতি অপসারণের তিনস্তর প্রস্তাব দিয়েছিলাম।

“বিচারপতিদের বিষয়ে অভিযোগের সকল তদন্ত অন্য কেউ নয়, বিচারপতিদের কমিটিই করবেন। সংসদ সেই তদন্তে পর্যবেক্ষণ করবে এবং রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু রায়ে একস্তর অর্থাৎ, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলই বহাল রাখা হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, যে সকল বিচারপতিরা অবৈধ সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়েছেন, জাল সার্টিফিকেট দিয়েছেন, দুর্নীতি করেছেন, আজ পর্যন্ত তাদের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।রায় পুঙ্খাণুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে জানিয়ে ইনু বলেন, “কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় অপ্রাসঙ্গিক সকল পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারসহ রায় পুনর্বিবেচনা করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিও ভূমিকা রাখতে পারেন।সংসদ রায়ের ওপর আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে। সেই সাথে প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তথ্যমন্ত্রী বলেন, আদালতের বারান্দায় কোনো বিচারপতির রায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রসঙ্গে খ-িত-বিকৃত ও উদ্দেশ্যমূলক কোনো রায়ের নামে ইতিহাসের ভ্রান্তচর্চার মাধ্যমে জাতির ইতিহাস বিকৃতিও ঘটানো সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে স্বাধীন বাংলাদেশ তার নিজস্ব পথেই চলবে।রায়ে দেওয়া পর্যবেক্ষণ রায়ের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিজস্ব বক্তব্যকে রায়ের অংশ বানিয়ে ফেলেছেন। নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা করা বিচার বিভাগেরও দায়িত্ব।