রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস সাক্ষাতের সময় তিনি এই সমর্থন চান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে চলমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন এলিস ওয়েলস।এএইচ মাহমুদ আলী এলিসকে রাখাইন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং বাংলাদেশ সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটি জানান।কফি আনান কমিশনের রিপোর্টকে মাথায় রেখে মিয়ানমার সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এমন আশা প্রকাশ করে এএইচ মাহমুদ আলী এলিসকে বলেন, রাখাইন প্রদেশের জন্য গঠিত কফি আনান কমিশন রিপোর্টকে বাংলাদেশ সমর্থন করে।

একদিনের সফরে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস ঢাকা এসেছেন। এটি তার প্রথম ঢাকা সফর।এদিকে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের অন্তত ১০টি গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই তথ্য জানিয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা ও অ্যাক্টিভিস্টরা দাবি করেছেন, গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে সেনাবাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি করেছে। ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেনাদের গুলির শিকার হয়েছেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা।

মিয়ানমারের সরকার জানিয়েছে, শুক্রবার আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)-র হামলার পর এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে। চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সময় গ্রামগুলোতে আগুন লাগিয়েছে। রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সরকারি বাহিনীই আগুন লাগিয়েছে এবং বিচারবহির্ভূতভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে।মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউজ জানিয়েছে, সরকারের উচিত অগ্নিকা-ের কারণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ তদন্তে স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের ওই অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া।স্যাটেলাইট তথ্যের বরাত দিয়ে মানবাধিকার সংগঠনটি জানিয়েছে, এবারের অগ্নিকা-ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সেনা অভিযানের চেয়ে এবারের আগুনের বিস্তৃতি অনেক বেশি ছিল। ওই সময় প্রায় দেড় হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়েছিল। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও অ্যাক্টিভিস্টদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবেই আগুন লাগানো হয়। সংস্থাটি জানায়, নতুন স্যাটেলাইট তথ্যে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তা উদ্বেগজনক। দাতা দেশ ও জাতিসংঘের উচিত রাখাইন রাজ্যের চলমান পরিস্থিতির সঠিক অবস্থা যাতে মিয়ানমার সরকার তুলে সেই পদক্ষেপ নেওয়া।এইচআরডব্লিউ বিবৃতিতে বলেছে, বিদ্রোহীদের ওপর দায় চালিয়ে দিলেই মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও মানবাধিকার অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তদন্ত করতে হবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস-র মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক এক বিবৃতিতে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।মহাসচিব সহিংসতা এড়াতে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার শুরু হওয়া সহিংসতার পর তিনদিনে মিয়ানমার থেকে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।২০১৬ সালে রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন।এদিকে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যৌথ সামরিক অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমারকে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন। নতুন করে শরণার্থীদের প্রবেশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গভীর উদ্বেগ জানান। সূত্র: আল জাজিরা।