মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন জেলায় ঈদপ্রতি বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন দেশের কয়েকটি জেলার মানুষ।শুক্রবার ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এসব এলাকার লোকজন পশু কোরবানি দেন।দীর্ঘদিন ধরেই তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম জেলার ৭ উপজেলার প্রায় ৬০ গ্রামের নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষ শুক্রবার বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদ উল আযহা উদযাপন করেছে।জেলার সাতকানিয়া উপজেলার মির্জারখীল দরবার শরীফের মুরিদরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে প্রতিবারের মতো এবারও একদিন আগেই কোরবানি দিয়েছেন।মির্জাখীল দরবার শরীফের মুখপাত্র ও মির্জাখীল উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বজলুল করিম চৌধুরী জানান, মির্জাখীলের প্রায় পুরো গ্রামের মানুষ আজ শুক্রবার সকালে ঈদ উল আযহার নামাজ আদায় করেছেন ও কোরবানি দিয়েছেন। প্রায় দুইশ’ বছর ধরে মির্জাখীল দরবার শরীফের মুরিদরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে একদিন আগে রোজা পালন, ঈদ উল ফিতর ও ঈদ উল আযহা উদযাপন করে আসছেন। দরবার শরীফের মুরিদরা নিজ-নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানি দিয়েছেন। অনেক মুরিদ মির্জাখীল দরবার শরীফে এসে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।’
দরবার শরীফের সূত্রমতে, সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, চরতি, সুইপুরা, বাজালিয়া, মনেয়াবাদ, পুরানগড়, গাটিয়াডেঙ্গা, মার্দাশা, রূপনগর, আলীনগর, সাতকানিয়া সদর।চন্দনাইশ উপজেলার বরকল, কেশুয়া, চর বরমা, হাশিমপুর, দোহাজারী, হাছনদন্দী, বাইনজুরি, কানাইমাদারি, সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ সদর, কাঞ্চননগর, পূর্ব হারালা; বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি, চাম্বল, ডোংরা, কালিপুর, শেখেরখীল, ছনুয়া, ভাদালিয়া, বড়ঘোনা।লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি, আধুনগর, চাকফিরানী, আমিরাবাদ, পুঁটিবিলা, কলাউজান, বড়হাতিয়া। আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া, তৈলারদ্বীপ, খাসহামা, কাটাখালী এবং বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ আগামীকাল ঈদ উল আযহার নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি দিয়েছেন।

চাঁদপুর :চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলার ৪০টি গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।শুক্রবার সকালে সাড়ে ৮টায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বদরপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা আবুল খায়ের। পাঁচ শতাধিক মানুষ এ নামাজে অংশ নেন।দিনাজপুর:দিনাজপুরে সদর, চিরিরবন্দর, কাহারোল ও বীরগঞ্জ উপজেলার দুই শত মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।শহরের বাসুনিয়াপট্টি এলাকার একটি কমিনিটি সেন্টারে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় মাওলানা মতিউর রহমানের ইমামতিতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ অংশ নেন।লক্ষ্মীপুর: জেলার সদর রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার ১১টি গ্রামে ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও বাজারের তালিমুন কোরান নূরানী মাদ্রাসা মাঠে সব চেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাওলানা আমিনুল ইসলাম ইমামতি করেন।

মুন্সীগঞ্জ:মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নয় গ্রামে শুক্রবার ঈদের নামাজ পড়েছেন ও পশু কোরবানি করা হয়েছে।গ্রামগুলোর জাহাগীর তরিকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছে।শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সদরের শিলই ঈদগাহে জাহাগিরীয়ায় ঈদ জামাতে ইমামতি করেন মনিরুল ইসলাম।

শরীয়তপুর: সৌদি আরব ও বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে মিল রেখে শরীয়তপুর জেলার শুরেশ্বর পীরের ভক্ত অনুসারীসহ জেলার প্রায় ৩০ গ্রামের ১২শ’ পরিবার আজ শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন।শরীয়তপুরের বৃহৎ ১ম জামাত অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী শুরেশ্বর দরবার শরীফ মাঠে সকাল ৯টায়। উল্লেখ্য ঈদের নামাজে বিপুলসংখ্যক মহিলা ভক্তও অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও কোটাপাড়া, প্রেমতলা, বাঘিয়া, পাপরাইল, লাকার্তা, ফকিরকান্দি, পুনাইখার কান্দি, ঘোষাল সিকদার কান্দি, হালৈসার, পন্ডিতসার, খিরাপাড়া, নোয়াদ্দা, ঘরিষার, শুরেশ্বরসহ বিভিন্ন গ্রামে ঈদুল আযহা উদযাপিত হচ্ছে।উল্লেখ্য সুরেশ্বর দরবার শরীফের গদ্দিনিশীন পীর কামাল নুরী জানায়, দরবার শরীফের পীর জানশরীফ মাওলানার আমল থেকে সৌদি আরব ও বিশ্বের অন্যান দেশের সাথে মিল রেখে তারা ঈদ পালন করে আসছেন। জানশরীফ মাওলানার মৃত্যুর পর তার ভক্ত ও মুরিদানরা এই নিয়ম মেনেই ঈদ উদযাপন করছেন।

বরগুনা: জেলার ২৫টি গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ আজ শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর ঈদুল আযহা উৎসব উদযাপন করছে।বরগুনার সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাজরাভাঙ্গা, কালিরতবক, গৌরীচন্না ইউনিয়নের ধূপতি, গৌরিচন্না, বেতাগী উপজেলার কাাজিরাবাদ ইউনিয়নের বকুলতলী, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী, গোজখালী, চন্দ্রা, কুকুয়া গ্রামে শুক্রবার সকালে (আটটা থেকে সাড়ে আটায়) ভিন্ন ভিন্ন ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।বরগুনা শহরের হাই স্কুল রোডের মোখলেছুর রহমান শরীফ জানান, তারা হযরত কাদেরিয়া চিশতির অনুসারী। সৌদিআরবের সাথে মিল রেখে তারা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উদযাপন করেন।আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নের আহমাদিয়া জামাত সম্প্রদায়ের মো. হান্নান মিয়া বলেন আমতলী তারা ছাড়াও গোজখালীর মরহুম পীর হযরত শাহ সলিম উদ্দিনের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ ও কোরবানি পালন করে থাকেন।