রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রোহিঙ্গা নির্যাতনকে সু চি যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, তা অত্যন্ত ঘৃণিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই ইস্যুতে বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ ও চিন্তিত বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সোমবার ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সোমবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সচিবালয়ে ঢোকেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এসময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন অর্থমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এখন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ আছে। এ বিষয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন, একইসঙ্গে ক্ষুব্ধও।এ প্রসঙ্গে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির তীব্র সমালোচনাও করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, শান্তিতে নোবেল প্রাইজ জয়ী অং সান সু চি রোহিঙ্গা নির্যাতনকে কিভাবে সমর্থন করে যাচ্ছেন, বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। এ নিয়ে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা ঘৃণিত।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৩০ পুলিশ ও সেনা পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় কঠোর অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও ধর্ষণও চালাতে থাকে। সু চি এ নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন বন্ধে কোনও পদক্ষেপ নেননি। বরং একতরফাভাবে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে তা কঠোরভাবে দমনের কথা বলেছেন। তার এ ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবেই সমালোচিত হচ্ছে।এর আগেও গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তখনও চুপ থেকে সমালোচিত হয়েছিলেন সু চি।দমন-পীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে গত ক’দিনে অন্তত ৯০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বিজিবি অনুপ্রবেশে বাধা দিলেও যারা ঢুকে পড়েছে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশেও কেউ কেউ দাবি তুলছেন। তবে আন্তর্জাতিক জনমত ও চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইছি। আবার মিয়ানমারের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা করছি। মিয়ানমারের রাখাইনে দমন অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামায় সরকার ‘কিছুটা চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ; বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।ঈদের ছুটি কাটিয়ে সোমবার নিজের কার্যালয়ে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মুহিত বলেন, এটা নিয়ে আমরা কি বলবৃ এটা নিয়ে চিন্তিত, কিছুটা ক্ষুব্ধ এবং আমরা এখন যেটা করছিৃ বিশ্ব জনমতে ব্যাপকভাবে নাড়াচাড়া দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।আপনারা শুনেছেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্পর্কে বলেছেনৃ আমরা মনে করি এটা এমন একটা বিষয়, যেখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রতিবেশী মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান। বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি।এরইমধ্যে গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে।জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, গত ১১ দিনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।এই উত্তেজনার মধ্যে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার গত শুক্রবার তিন দফা বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিস ওয়েলস গত ৩০ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।এ বিষয়ে মুহিত বলেন,আমরা মিয়ানমারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছি, রাখছিও। কিন্তু তাদের অত্যাচারী যে একটা মনোভাব এতদিন ধরে চলছে এবং যেখানে অত্যন্ত দুঃখের বিষয়ৃ শান্তির জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত অং সান সুচি তিনিও এটাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত ঘৃণিত এই পদক্ষেপ।সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, তেমন বৃষ্টি না হওয়ার এবার স্বস্তিদায়ক ঈদ হয়েছে। যেটা ভাবা হচ্ছিল ঈদে বৃষ্টি হবে; কিন্তু বৃষ্টি না হওয়া সবাই ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছে।ঈদের ছুটি শেষে কার্যালয়ে ফিরে নিজের দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেহমানদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন মুহিত।কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও তার মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।তিনি বলেন, মনুষ্য সৃষ্ট এই দুর্যোগের ফলে বাড়তি বোঝা চেপে যাচ্ছে, আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে একটি বোঝা হয়ে আজকে আসছে। এদের খাবার জোগাড় করা, এর তো একটা খরচ আছে। আমি বিশ্বের বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে দ্রুত সাহায্য কামনা করব। মিয়ানমান সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে। এটাতো প্রথম নাৃ প্রায়ই এমন হচ্ছে।স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন,এবার ঈদে মানুষের মনে উৎসবের আমেজ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গ্রামের মানুষ ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করেছে।বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের বলেন, আমার চেষ্টা করেছি এবার ঈদে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় ভাল অবস্থায় ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমাদের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সিমিশন এখনও কমপ্লিট হয়নি; হয়ত এ মাসে শেষ হবে। এ কারণে কিছু কিছু এলাকায় কিছুটা সমস্যা ছিল।আগামী মে-জুনের মধ্যে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গরম, রোজা ও সেচের চাহিদা একসাথে আসছে। আমাদের টার্গেট, অন্তত পনেরশ মেগাওয়াট অতিরিক্ত যাতে দিতে পারি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য। আশা করছি আগামী বছর আরও তিন হাজার মেগাওয়াট যেন যুক্ত হয়।প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের লক্ষ্য ছিল প্রতিবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ১২০০ মেগাওয়াট করে বাড়ানোর। তা না পারলেও ৯০০ থেকে ১০০০ মেগাওয়াট করে বছরে বাড়ছে।এখন ডিমান্ড বেড়ে গেছে দুই হাজারের উপরে, এ কারণে রিভিউ প্ল্যান করে ফেলেছি। আশা করছি সমস্যা হবে না।