হজ শেষে হাজিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হচ্ছে বুধবার থেকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফিরতি হজ ফ্লাইট চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গিয়েছেন মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ২২৯ জন। ভিসা পেয়েও শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি ৩৬৭ জন।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, হজযাত্রী পরিবহনে বিমান নিজস্ব সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের পাশাপাশি ৪০৬ আসনের লিজের বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে।

হজযাত্রীদের সুবিধার্থে বিমান ঢাকা থেকে যাত্রা পূর্বে হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইটের বোর্ডিং কার্ড দিয়ে দিয়েছে। ১৬৯টি ফ্লাইটে হাজিরা দেশে ফিরবেন । প্রত্যেক হজযাত্রী বিনামূল্যে সর্বাধিক ২টি ব্যাগে ৪৬ কেজি মালামাল আনতে পারবেন। বিজনেস ক্লাসের জন্য সর্বাধিক ২টি ব্যাগে ৫৬ কেজি মালামাল বহন করতে পারবেন। কেবিন ব্যাগেজে ৭ কেজি মালামাল সঙ্গে রাখতে পারবেন হজযাত্রীরা। তবে কোনোভাবেই প্রতি পিস ব্যাগের ওজন ২৩ কেজি এবং বিজনেস ক্লাসে ২৮ কেজির বেশি হতে পারবে না।প্রত্যেক হাজীর জন্য ৫ লিটার জমজমের পানি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে, হাজিরা দেশে ফিরলে তা দেওয়া হবে। হজ যাত্রীরা যেকোনও ধারালো বস্তু যেমন ছুরি, কাঁচি, নেইল কাটার, ধাতব নির্মিত দাঁত খিলন, কানও পরিষ্কারক, তাবিজ ও গ্যাস জাতীয় বস্তু যেমন অ্যারোসল এবং ১০০ (এমএল)-এর বেশি তরল পদার্থ হ্যান্ডব্যাগেজে বহন করা যাবে না।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, চলতি হজ মৌসুমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সর্বোচ্চ সংখ্যক (৬৪ হাজার ৮৭৩ জন) হজযাত্রীকে নিরাপদে সৌদি আরবে পৌঁছে দিয়েছে। তাদের নিরাপদে ফিরেয়ে আনতে বিমানের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। চলতি মৌসুমে বিমানের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন কিন্তু বিমান অতিরিক্ত ১ হাজার ২৭৪ জন হজযাত্রী নিয়েছে। জের খুতবায় ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের ডাকমক্কার আরাফাতের ময়দানে বৃহস্পতিবার জড়ো হয়ে ২০ লাখের বেশি মুসলিম এক সঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে; প্রার্থনা জানান বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণে।মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম পালনীয় হজের এটাই ছিল মূল আনুষ্ঠানিকতা; এরপর মিনায় প্রতীকী শয়তানের দিকে পাথর নিক্ষেপ শেষে শুক্রবার পশু কোরবানি দেওয়ার মধ্য দিয়ে সারা হবে হজ।

নানা বর্ণ, নানা গোত্র, নানা জাতির লাখো মুসলিম প্রতি বছর মক্কায় জড়ো হন হজ পালনে; এবার বাংলাদেশ থেকে হজে গেছেন ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মুসলিম।ইহরাম বাঁধা মুসল্লিদের কাবাঘর তাওয়াফের মধ্য দিয়ে বুধবার শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা; এরপর সবাই রওনা হন পাঁচ কিলোমিটার দূরে মিনায়; সেখানে ইবাদতে মশগুল হন তারা, জিকির করেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়।

বুধবার এশার নামাজের পর থেকেই অনেকে মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে থাকা মুসল্লিরা।বৃহস্পতিবার দুপুরে আরাফাতের মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা পাঠ করেন এবারের নতুন খতিব সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. সা’দ বিন নাসের আশ শিছরি।খুতবায় মুসলিম উম্মাহর জন্য নানা দিক-নির্দেশনা তুলে ধরেন সা’দ বিন নাসের। তিনি মুসলিমদের আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার আহ্বান জানান। বলেন, আল্লাহ যা বারণ করেছে, সে পথে না যেতে।মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে নিজেদের ঐক্য মজবুত করার আহ্বান জানান সা’আদ বিন নাসের।খুতবার পরই সবাইকে নিয়ে জোহর ও আসরের নামাজ হয়; যাতে ইমামতি করেন তিনি।এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাখ লাখ হাজির সময় কাটে দোয়া, মোনাজাত ও মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে।

চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যে যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে ইবাদত করেন।মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।১৪ শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ।ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।আরাফাতের ময়দান থেকে মুসল্লিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই রওনা দেবেন মুজদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন তারা।মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন তারা। তারপর মিনার জামারায় (প্রতীকী) শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। তারপর ফজরের নামাজ শেষে হাজিরা আবার ফিরে আসবেন মিনায়, যেখানে তাঁবুতে তারা রয়েছেন গত দুই দিন ধরে।

শুক্রবার সকালে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানির পর পুরুষরা মাথা মুন্ডু করে ইহরাম ত্যাগ করবেন। এরপর পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এই নারী-পুরুষরা হবেন হাজি। সৌদি আরবের সংবাদ মাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭১টি দেশের ২০ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবার হজ করছেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজারের বেশি।দুই বছর আগে হজ পালনের সময় দুটি দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলেও তারপর থেকে সৌদি আরব সরকারের কড়া ব্যবস্থায় আর কোনো অঘটন ঘটেনি। এবারও হজ ছিল নির্বিঘœ।

হজে যাওয়ার পর সৌদি আরবে বাংলাদেশের মোট ৪৫ জন হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে ৪১ জন পুরুষ, বাকি চারজন নারী।বাংলাদেশ হজ মিশনের হেল্প ডেস্ক এ কর্মরত হাফিজুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সুন্দর সাবলীল ভাবে হজের কার্যক্রম পালিত হচ্ছে, কোনো সমস্যার সংবাদ পাওয়া যায়নি।আরাফাত ময়দানে অবস্থানরত বাংলাদেশি সাংবাদিক আবু তাহের জানান, বাংলাদেশিরা ভালোভাবেই হজ পালন করছেন। দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে অনেকে ভয় পেলেও কোনো সমস্যা হয়নি।মক্কায় হাজীদের সেবার কর্মরত কাউন্সেলর মাকসুদুর রহমান জানান, হাজীদের সেবায় বাংলাদেশ হজ মিশনের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সতর্ক রয়েছে।