ঝিনাইদহের উজির আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম লিকুর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের হুমকি দেওয়া, খারাপ আচরণ, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট উজির আলী স্কুলে যোগদান করেন শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। তিনি যোগদান করার পর থেকেই কোন্দল সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনান্য শিক্ষকদের বেতন কর্তনের হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখেন। তার অনৈতিক কথা কেও না শুনলে নানা প্রকার হুমকি দেন। মাঝে মাঝে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের কথা সাধারণ শিক্ষকেরা প্রতিবাদ করলে তাদের উপরে মারমুখি আচরন করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি।

জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সাইফুলের রুটিনে দুটি ক্লাস নেওয়ার কথা রয়েছে। একটি গণিত এবং অন্যটি সহপাঠ। কিন্তু তিনি একটি ক্লাসও নেন না। তার ক্লাস নেন অন্যান্য শিক্ষকেরা। গত ২য় সাময়িক পরীক্ষায় ২৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৯ জন পাশ করেছেন। শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ। স্কুলের বিভিন্ন কাজে তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানে এক শিক্ষক জানান, স্কুলের টয়লেট ভরে গেলে পরিস্কার করার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন তিনি। এছাড়াও তিনি কথিত শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন বলে তাকে সম্মাননা জানানোর জন্য ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ফুলের টব, মেরামতসহ নানা কাজের অজুহাত দেখিয়ে সাইফুল ইসলাম টাকা আদায় করছেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সকাল ৯ টা থেকে শুরু করে বিকাল পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে বসে থাকেন। কোন ক্লাস নেন না। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তার কাছে লোকজন আসে। বিদ্যালয়ের কাজ না করে তিনি তাদের সাথে সময় কাটান বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে আরও জানা যায়, প্রাক-প্রাথমিকের জন্য প্রতি বছর ৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ আসে শিক্ষার্থীদের খেলনা কেনার জন্য। কিন্তু শিক্ষক সাইফুল ইসলাম অর্ধেকের বেশি টাকা আত্মসাত করেন। তার বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক কথা বললে নানা প্রকার হুমকি দেয় সে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক অত্যাচার নিষেধ থাকলেও প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের কারণে অকারণে মারধর করেন। ৩য় শ্রেণীর এক ছাত্রের অভিভাবক জানান, সামনের বেঞ্চে বসার কারণে তার ছেলেকে স্কেল দিয়ে মারধর করে। তিনি অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষকের কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। ৫ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী জানান, প্রধান শিক্ষকের সম্মাননা দেওয়া জন্য তাদের নিকট থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।
অভিভাবকরা তার কাছে কোন সমস্যার কথা বলতে আসলে তিনি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবকদের সাথে মোবাইলে কথা বলে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে কথা বলা হলে, তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য ২০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে কি না আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুসতাক আহম্মেদ বলেন, শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা জানা ছিল না বা কেউ অভিযোগ দেয়নি। এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

খালিদ বিন মিজান শিশির