মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবিক বিপর্যয় আখ্যা দিয়েছেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংকট উত্তরণে মিয়ানমারের সরকারকে ৭টি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একটি কমিটি গঠন করে ওইসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ন্যাশনাল’-এ লেখা এক নিবন্ধে ওই পরামর্শগুলো তুলে ধরেন ড. ইউনূস।

আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ন্যাশনাল’-এ লেখা এক নিবন্ধে নিজের জন্মস্থান চট্টগ্রাম সংলগ্ন এলাকায় রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ড. ইউনূস। তিনি এ পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দেন। নিবন্ধে তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সরকারকে খুব শিগগির একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠনের পরামর্শ দেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের গঠিত কমিশনের সদস্যদের নিয়ে ওই কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন তিনি।গঠিত বাস্তবায়ন কমিটির কাছে ড. ইউনূসের দেওয়া ৭টি পদক্ষেপের প্রস্তাব হচ্ছে: অ্যাডভাইজার কমিশন অব রাখাইন স্টেট- এসিআরএসের (কফি আনান কমিশনের) সুপারিশকৃত পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা নজরদারি করা। মিয়ানমারে সহিংসতা নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ ও রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ থেকে বিরত রাখা। মিয়ানমারের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঞ্চলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা।মিয়ানমার ত্যাগকারী রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। মিয়ানমারের ভেতরে শরণার্থী শিবির তৈরি করা এবং জাতিসংঘের অর্থায়নে ও তত্ত্বাবধানে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।এসিআরএসের প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া। মিয়ানমারের সব নাগরিককে রাজনৈতিক ও চলাফেরার মুক্তির নিশ্চয়তা দেওয়া।নিবন্ধে আনান কমিশনের রিপোর্টের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ওই রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা, মত প্রকাশ ও চলাচলের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান, আইনের শাসন নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে দ্রুত সংঘবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে এসব পদক্ষেপ না নিলে আনান কমিশনের আশঙ্কা অনুযায়ী এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ বিস্তৃত হতে পারে।