জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকথ ওবো জানিয়েছেন, ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর নিরাপত্তার জন্য চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দিয়েছে, যা সত্যি প্রশংসার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক সমস্যা আছে। আর শরণার্থীর ঢল শুরু হওয়ায় দেশটি জটিল সময় পার করছে।বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কমিশন কার্যালয়ে ইউএনএইচসিআরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জর্জ ওকথ ওবো বলেন, রোহিঙ্গাদের এই ঢল বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। তিনি বলেন, এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের বিষয়ে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। আশা করি, বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রমকে অন্যান্য দাতা সংস্থাও সমর্থন করবে।এ সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা কক্সবাজার গিয়েছিলেন। আমরাও গিয়েছিলাম। সে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে কী উদ্যোগ নেওয়া যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এদিকে,মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা অভিযানে হত্যা-অগ্নিসংযোগের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গার ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার এই সংকট নিয়ে আলোচনায় বসে নিরাপত্তা পরিষদ।বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৫ সদস্যের এই কাউন্সিল মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অতিরিক্ত সহিংসতার খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে।রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ, পরিস্থিতির উত্তরণ, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বেসামরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য ও অস্থায়ী সদস্য সুইডেন।বৈঠকের পর জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফট বলেন, গত নয় বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতিতে সম্মত হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্স। এই দেশগুলোর প্রতিটির যে কোনো প্রস্তাব আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে চীনের, সম্প্রতি বাংলাদেশে নিয়োজিত দেশটির রাষ্ট্রদূত চলমান এই সংকটের জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করেন।বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইনে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।পরদিন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল। কয়েকশ দশক ধরে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এসেছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা।নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকের আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাখাইনে সেনা অভিযান স্থগিত এবং রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।নিউ ইয়র্কে সংস্থাটির সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে।গত সপ্তাহে যখন আমরা মিলিত হয়েছিলাম সে সময় এক লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। এই সংখ্যা এখন তিনগুণ হয়ে প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার হয়েছে।অনেকে তাঁবু দিয়ে অস্থায়ী ঘর করে বা নিজেদের যা আছে তাই নিয়ে উদারতার সঙ্গে পাশে দাঁড়ানো স্থানীয়দের সঙ্গে থাকছেন। কিন্তু নারী ও শিশুরা আসছে ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিয়ে।এই সংকটকে জাতিগত নির্মূল বলা যায় কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গাদের) এক তৃতীয়াংশকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে-এটাকে বোঝানোর জন্য আপনি কি আর কোনো ভালো শব্দ পাবেন?