টানা বৃষ্টিতে ঝুপড়ি ভেঙে মানবেতর জীবনযাপন করছে রোহিঙ্গারানিম্নচাপের কারণে ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অস্থায়ী ঝুপড়িগুলোও অনেকাংশ ভেঙে গেছে।বৃষ্টির কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।এদিকে, আজও-মঙ্গলবার কক্সবাজারের কুতুপালং, বালুখালীসহ বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।তিনি এসময় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।কক্সবাজারের কুতুপালং ও উখিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে প্রতিনিয়তই। বাংলাদেশ সরকার এসব শরণার্থির জন্য তৈরি করে দিয়েছে অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্প। এছাড়াও বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর সহায়তায় চলছে শেড নির্মাণের কাজ। রয়েছে লঙ্গরখানাও।তবে,জাতিগত শুদ্ধি অভিযান থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও অসহায় এসব রোহিঙ্গাকে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করতে হচ্ছে কখনও বুনো হাতির সঙ্গে কখনো বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে।

এরমধ্যে সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অস্থায়ী ঝুপড়িগুলোও অনেকাংশ ভেঙে গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নতুন করে আবারো ভেঙে যাওয়া ঝুপড়িগুলো মেরামতে ব্যস্ত তারা। মানবেতর জীবন যাপন করছে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গা।এরআগে, রোববার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন্য হাতির আক্রমণে দুজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য প্রচুর ত্রাণ আসছেÑ বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও অনেকেই ত্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু প্রচুর ত্রাণ থাকার পরও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ঠিকমত বিতরণ করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ দিনে একাধিকবার ত্রাণ পেলেও কেউ কেউ কিছুই পাচ্ছে না। ত্রাণদাতা আর উন্নয়ন সংস্থাগুলো মনে করছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকলে শরণার্থীদের সবার হাতেই ঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া সম্ভব।উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি আলমগীর সবুজ জানান এসব কথা।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানে করে ত্রাণ যাচ্ছে টেকনাফ ও উখিয়ায়। ব্যক্তিগত ও নানা সংগঠনের উদ্যোগে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের কাছে তুলে দেয়া হচ্ছে এই ত্রাণ। কেউ সরাসরি খাবার রান্না করে বিতরণ করছেন কেউ আবার দিচ্ছেন চাল, ডাল, ত্রিপল, বিস্কিট ও পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী।একটি ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু। হুড়োহুড়িতে ট্রাক থেকেই ছুড়ে দেয়া হচ্ছে এসব ত্রাণ সামগ্রী।বিশৃঙ্খলার মধ্যে বাধ্য হয়ে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ। ফলে কেউ পাচ্ছে কয়েকবার আবার অনেকেই কিছুই পাচ্ছেন না।ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা ও স্যানিটেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও কাজ করছে জানান বেসরকারি ‘ইপসার’ প্রোগ্রাম অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য শেড নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। খোলা হয়েছে ৯টি লঙ্গরখানা- যেখানে প্রতিটিতে ৫০ হাজার শরণার্থীকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকছে।বালুখালীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে কাদের বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য সবকিছুই করছে সরকার কেউই না খেয়ে থাকবে না।

এছাড়া উখিয়ার কুতুপালংয়ে হাতির আক্রমণে শিশুসহ ২ রোহিঙ্গা নিহত ও আহত হয়েছেন ৩ জন।১৪টি পয়েন্ট দিয়ে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। এদের জন্য শেড নির্মাণে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়াও খোলা হয়েছে ৯টি লঙ্গরখানা। যেখানে প্রতিটি লঙ্গরখানায় ৫০ হাজার শরণার্থীকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া, ১১টি নির্দিষ্ট পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।এরইমধ্যে, রোহিঙ্গা শিশুদের টিকাদান ও স্বাস্থ্য সেবার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের কর্মসূচিতে আট হাজার ৭০৩ জন শিশুকে টিকা দেয়া হয়। এরমধ্যে পোলিও টিকা নিয়েছে চার হাজার ৯৮৩ জন। শরণার্থীদের মধ্যে চারজন হাম, ১৬ জন পলিও এবং একজন এইচআইভি রোগি সনাক্ত হয়েছে। তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়াসহ রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে দিকেও সর্তকর্তা অবলম্বন করা হচ্ছে।