এবারে একাধিক প্রাইভেট ছাত্রীর সাথে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের মেহেদী হাসান সুমন নামের এক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ সংখ্যা প্রায় ১৯ হবে বলে ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে। শিক্ষক-ছাত্রীর অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে মোটা অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অনেকেই দাবি করেন। ঐ চরিত্রহীন, লম্পট শিক্ষককে বহিস্কার ও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা ছাত্রলীগ। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কলেজ শিক্ষক সুমনের বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেন লালমনিরহাট হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মশিউর রহমান মামুন।

এবিষয়ে ঘটনাটি তদন্তপূর্বক দ্রুত আইনগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোড় দাবি জানান সচেতন মহলসহ হাতীবান্ধা উপজেলাবাসী লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে, ছাত্রলীগ সভাপতির সেই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অনার্স সেকশনের ইংরেজি শিক্ষক মোঃ মেহেদী হাসান সুমন, একজন দুশ্চরিত্র ও লম্পট শিক্ষক। বিগত কয়েকদিন হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “হাতীবান্ধা পরিমল জয়ধর” শিরনামে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) হতে “ফেসবুকে” ঐ কলেজের নাম উল্লেখ করে উক্ত শিক্ষকের স্পর্শকাতর ছবিসহ বিষয়টি অনেকেই প্রকাশ্যে সমালোচনা ও নিন্দা করছেন।

তিনি আরও উল্লেখ করে বলেন, ঐ কলেজ রোডে অবস্থিত প্রজাপতি স্টুডিও সংলগ্ন একটি ব্যক্তিগত কক্ষে কলেজ শিক্ষক সুমন ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন। তার কাছে পড়তে আসা একাধিক ছাত্রীকে বিভিন্ন কৌশলে লালসার হতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুমকি দিত ঐ শিক্ষক।

ছাত্রলীগ সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু ফেসবুকে ঘটনাটির বিবরণ ও স্পর্শকাতর ছবি প্রকাশ হওয়ায় সর্বস্তরের জনসাধারণ ও যুব সমাজের মাঝে এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি করেছে। একটি প্রভাবশালী মহল উক্ত লম্পট শিক্ষকের কুকীর্তি ধামাচাপা দেয়ার প্রবল চেষ্টায় লিপ্ত আছেন বলে জানান তিনি।

কলেজ ও শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী ঐ চরিত্রহীন, লম্পট শিক্ষক মেহেদী হাসান সুমনের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি বব্যবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অতিদ্রুত আহবান জানান। তানাহলে কঠোর কর্মসূচী নেয়া হবে বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি।

এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে, প্রাইভেট ছাত্রীদের সাথে কলেজ শিক্ষকের অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে ঐ শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ করেন অনেকেই। অনেকেই আবার আশংকা করছেন, ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রীরা ভিডিও ধারণকারী ও ভিডিও বহনকারী কর্তৃক ব্লাকমেইলে শিকার হতে পারেন। এ ছাড়া ‘সত্যপ্রকাশ চৌবে’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে কিছু অস্পস্ট যৌন নিপীড়নের ছবি আপলোড করে বলেন ‘ঘটনা সত্য, সুমন মাষ্টার হাতীবান্ধার পরিমল’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবী করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

এবিষয়ে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এবিষয়ে একটি অভিযোগপত্র পাওয়ার পর গভর্নিং কিমিটির ২ জন সদস্য, কলেজ শিক্ষক ২ জন ও কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালসহ ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কলেজে শিক্ষক মেহেদী হাসান সুমনের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঐ কলেজ শিক্ষকের ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিওর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই ঘটনার একটি ভিডিও প্রজাপতি স্টুডিওর মালিক দেলোয়ার হোসেন তার কাছে জমা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি কলেজ শিক্ষক সুমনের পাশাপাশি বিভিও নিয়ে বাণিজ্য করার অপরাধে ঐ স্টুডির মালিক দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করবেন বলে জানান।

এবিষয়ে হাতীবান্ধা থানার অফিসারস ইনচার্জ বলেন, এবিষয়ে আমাকে একটি দরখাস্তের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ভুক্তভোগী মেয়ে অথবা তাদের অভিভাবক এবিষয়ে অভিযোগ করলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক মেহেদী হাসান সুমনের সাথে মোবাইল ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন গাড়িতে আছি। পরে কথা বলব।