যেকোনও বড় ধরনের দুর্যোগে সাত ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে দেশের ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগে ব্যাংকিং খাতে ঋণ, নিরাপত্তা, তারল্য, সুদের হার, দক্ষতা সংকট, সুনাম এবং সামষ্টিক অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এজন্য এখনই ভবিষ্যৎ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে অ্যাড্রেসিং ডিজ্যাস্টার রিস্ক বাই ব্যাংকস: বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ’ শীর্ষক এক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। সেমিনারে ‘ইমপ্যাক্ট অব অ্যাডপটিং ব্যাসেল অ্যাকর্ড ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আরও একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

অ্যাড্রেসিং ডিজ্যাস্টার রিস্ক বাই ব্যাংকস: বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধরনের দুর্যোগে ব্যাংকের কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে নেই। এ তথ্য সংরক্ষণে ব্যাংকগুলোর অনীহা বিদ্যমান। আমানত, বিনিয়োগ প্রভাব- এ সম্পর্কেও ব্যাংকিং খাত কোনও তথ্য সংরক্ষণ করে না। যাবতীয় কৃষি ঋণ বিতরণ বীমার আওতায় আনতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে বলে ৪৭ শতাংশ ব্যাংকার মত দিয়েছেন। ১৭ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছেন, সচেতনতা প্রয়োজন। এদিকে, ‘ইমপ্যাক্ট অব অ্যাডপটিং ব্যাসেল অ্যাকর্ড ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী পুঁজি সংরক্ষণ জরুরি।বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে দুর্যোগে ব্যাংকিং খাত থমকে যায়। প্রায়ই সুদ মওকুফ, ঋণ পুনঃতফসিল করতে হয়। এ কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্যাংকিং খাত অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়ে। ২০১৫ সালের রাজনৈতিক গোলযোগেও ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যাসেল -৩ বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৬ থেকে ব্যাসেল -৩ বাস্তবায়ন শুরু হয়। এটি ২০১৯ সালের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআইবিএমের গবেষণায় পাওয়া সুপারিশগুলো ব্যাসেল-৩ এর কাজে আসবে।বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাসল -৩ বাস্তবায়নে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে সচেতন হতে হবে। বোর্ডকে প্রত্যেকটি ধাপ বোঝানোর দায়িত্ব টপ ম্যানেজমেন্টের।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, ব্যাংকিং খাতে কিছু ক্ষেত্রে অস্থিরতা চলছে। হঠাৎ ব্যাংক কর্মীদের ছাটাই করা হচ্ছে। আবার অন্যখাতের লোকজনকে বড় বেতনে ব্যাংকের সিনিয়র পদে বসানো হচ্ছে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো খবর নয়। মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনটা জরুরি। খুব তাড়াহুড়া না করে পরিকল্পনা তৈরি করে ব্যাচেল-৩ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনজুর আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ভালো অবস্থানে ফিরছে। বিডিবিএল ১০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে সরকারকে। বড় দুর্যোগে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি এড়াতে বীমার আওতায় আনার ওপর জোরারোপ করেন তিনি। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম।