সভ্যতা আর প্রযুক্তির আগ্রাসনে হারাতে বসা গ্রাম বাংলা আর সবুজ-শ্যামলিমার রক্ষায় আরও বেশি উদার ও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজধানীতে উদযাপিত হচ্ছে শরৎ উৎসব।শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করে শরৎ উৎসব।গান-কবিতা-নৃত্যে শরৎ বন্দনায় সাজানো হয় উৎসবের মূল আয়োজন। মধ্যে ছিল ‘শরৎ কথন’ পর্ব। সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে সকাল ১০টা অবধি।উৎসবে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশের প্রকৃতি সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।একইসঙ্গে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা নাগরিকদের উপর হওয়া দমন-পীড়ন নীতির সমালোচনা করে অসহায় নাগরিকদের পাশে থাকার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তারা।সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের পাশাপাশি শরৎ কথন পর্বে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ সভাপতি অধ্যাপক নিগার চৌধুরী।স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক নিগার চৌধুরী বলেন, এবারের আয়োজনের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। আমরা যখন এখানে শরৎ উৎসব বা শরৎ বন্দনা করছি, তখন রাষ্ট্রীয় হিংসার শিকার হয়ে লাখো মানুষের রক্ত¯্রােত ভাসছে বঙ্গোপসাগরে। আর তখনই মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
এবারের উৎসবের মাধ্যমে আমরা সেই অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধের বাংলাদেশের কথাই বলতে চাই।উৎসবে-পার্বণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ‘মানবিক সংস্কৃতির’ কারণেই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন রামেন্দু মজুমদার।অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন,সীমাবদ্ধ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মানবতার এক বিশাল বার্তা দিল।সিলেবাসকেন্দ্রিক পড়াশোনার কারণে তরুণ প্রজন্ম বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যের কথা জানেই না বলে আফসোস করেন তিনি।ঋতুবৈচিত্র্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় মানুষ প্রকৃতিকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।তিনি বলেন, “আজকে যুবক, তরুণরা পর্যন্ত প্রকৃতির নানা বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনের কথা বলতে পারে না। শরৎ নিয়ে কত কবি কত বন্দনা করে গেছেন। এমন উৎসবের মাধ্যমে তাদের এসব জানানোর প্রয়োজন আছে।হায়াৎ মামুদ বলেন, “শহরে এসে আমরা কাজের চাপে হোক বা নানা সঙ্কটে হোক, গ্রামকে ভুলে যাই। গ্রামই তো আসল। গ্রামে ফিরে যেতে না পারলেও আমাদের মন যেন সেই গ্রামেই পড়ে থাকে, আজ সকলের হোক এ প্রত্যয়।”

আবু কালামের বেহালা আর তুলসী সাহার তবলার ধুনে শুরু হয় উৎসবের আন্ষ্ঠুানিকতা। পরে শিশুকিশোর সংগঠন সুর ও বিহারের শিশুশিল্পীরা দলীয় সংগীত পরিবেশন করে। তারা গেয়ে শোনায় রবীন্দ্র সংগীত ‘আলোর অমল কমলকখানি’ ও ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’।উৎসবে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সমস্বর, স্বভূমি লেখক শিল্পীকেন্দ্র, আনন্দন, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ, নৃত্যজন, নন্দন কলাকেন্দ্র, স্পন্দন।একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা রায়, আবু বকর সিদ্দিক, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, সঞ্জয় কবিরাজ, ফেরদৌস কাকলী, মীরা ম-ল, আশিকুর রহমান, রতœা সরকার, আরিফ রহমান, শ্রাবণী গুহ রায় ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন রফিকুল ইসলাম ও নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি।

IMage Courtesy : Shohrab Hossain Titu