মিয়ানমার জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জনসংখ্যা হ্রাসে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে সহিংস অভিযান চালাচ্ছে বলে বাংলাদেশ অভিযোগ করেছে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে চলে এসেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘ইতিহাসে এই প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে। ১৮ লাখের মধ্যে বর্তমানে মিয়ানমারে মাত্র ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযান শুরু হলে নতুন করে তাদের পালিয়ে আসা শুরু হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ফলে বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশে আরো ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
মাহমুদ আলী বলেন, মিয়ানমার সরকার ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার এক মাস আগেই রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন শুরু করে। তারা পুরো এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে খাদ্য, পানি ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিলে উত্তেজনার সূচনা হয়।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকার ১৯৯২ সালের ভেরিফিকেশন সিস্টেমের আওতায় যে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে সম্মত নয়। কারণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ব্যবস্থা অবাস্তব। তাই বাংলাদেশ দু’দেশের ভেরিফিকেশন স্ট্রাটেজি সম্বলিত নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। মাহমুদ আলী বলেন, আগমনের তারিখ বিবেচনা ছাড়াই সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত ২ অক্টোবর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে এবং এ প্রস্তাবের খসড়া মিয়ানমারের ইউনিয়ন মন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটি এখন আঞ্চলিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এ সমস্যা বাংলাদেশ ও মায়ানমারের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নয়। এ সংকট সৃষ্টিতে বাংলাদেশের কোন ভূমিকা নেই। এ সংকটের কেন্দ্রবিন্দু মিয়ানমারের এবং মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ চাপ দিনে দিনে আরো বাড়ছে।

মন্ত্রী বলেন, গত ২৫ আগস্ট নতুন করে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে ২৮৪টি গ্রাম পুুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রমাণ পেয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিজ) নিজস্ব সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করে। এতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকও বক্তব্য রাখেন।